লোডশেডিং ভোগান্তিতে সাড়ে তিন লাখ গ্রাহক

বাকলিয়ায় তিন ট্রান্সফরমারের একটি বিকল

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে দিনে রাতে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। পিডিবি বলছে, বাকলিয়া গ্রিড সাবস্টেশনের উচ্চ ক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, গ্রিড সাবস্টেশনের ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় মুরাদপুর থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট, কালুরঘাট হয়ে, বৃহত্তর বাকলিয়া, পাথরঘাটা, আন্দরকিল্লা, চন্দনপুরা, চকবাজারসহ নগরীর প্রায় সাড়ে তিন লাখ গ্রাহককে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। শনিবার দুপুর একটা ৪০ মিনিটে ট্রান্সফরমারটি বিকল হওয়ার পর থেকে এ ভোগান্তি শুরু হয়। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিকল ট্রান্সফরমারটি চালু কিংবা পুনঃস্থাপন করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান
প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার দেওয়ান সামিনা বানু দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাকলিয়ায় পিজিসিবি’র ৭৫ এমবিএ সক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় পুরো নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। শনিবার দুপুর থেকে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। ট্রান্সফরমারটির বিকল্প না থাকায় গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বর্তমানে পিক আওয়ারে ১৪শ থেকে ১৭শ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। গরম বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ২৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিক আওয়ারে ২ হাজার ৩৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩ অক্টোবর পিকআওয়ারে ২৩ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৫৩৮ মেগাওয়াট। এদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬৭৬ মেগাওয়াট।
পাথরঘাটা বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম রোববার রাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘পাথরঘাটা বিতরণ বিভাগে পিক আওয়ারে ৩৪ মেগাওয়াটের চাহিদা থাকে। আমাদের ১০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং করতে হচ্ছে। একইভাবে কালুরঘাট ও বাকলিয়া বিতরণ বিভাগকেও ১০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সোমবার ট্রান্সফরমারটি চালুর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে পিজিসিবি থেকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, ট্রান্সফরমারটি চালু হলে এ জটিলতা থাকবে না।’
নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোববার ভোররাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। আবার দুপুরের পর রাত পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করেছে।’ চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ রোববার ১১টার পর থেকে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করেছে। সন্ধ্যার পরও দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না।’ মুরাদপুর এলাকার সৈয়দুল হক বলেন, ‘মধ্য রাত থেকে মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। এমনিতে গরমে কাহিল। রাতে বিদ্যুৎ না থাকাতে শিশুদের নিয়ে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে।’
কালুরঘাট বিক্রয় বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস ইবনে আলম, স্টেডিয়াম বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাকলিয়া গ্রিড সাবস্টেশনে ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় নগরীতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সামান্য জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারিগরি ত্রুটি লাঘবে কাজ চলছে বলে জানান তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, বাকলিয়া গ্রিড সাবস্টেশনে ৩টি উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফরমার রয়েছে। তন্মধ্যে একটি বিকল থাকায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। এটি যদি পুনঃস্থাপন করতে হয়, তাহলে মুরাদপুর থেকে শুরু করে কালুরঘাট, ওইদিনে বাকলিয়া, পাথরঘাটা, কোতোয়ালী হয়ে, চকবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকার গ্রাহকদের অন্তত আরও ৭ থেকে ১০দিন লোডশেডিংয়ে পড়তে হবে। কারণ বিকল্প কোন লাইন নেই।’
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপস কুমার ভৌমিক রোববার রাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাকলিয়া গ্রিড সাবস্টেশনের ১৩৩/৩৩ কেভি লাইনের ৭৫ এমবিএ ক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমারের কারণে লাইন ট্রিপ করেছে। ঢাকা থেকে পিজিসিবির প্রকৌশলীরা এসেছেন। তারা দিনভর কাজ করেছেন। তাদের রিপোর্টটি এখনও পাওয়া যায়নি। সোমবার সকালেও আরেকটি টিম আসবেন। তাঁরা পরীক্ষা করে যদি ট্রান্সফরমারটি সচল করার সুযোগ থাকে তাহলে দুপুর ১২টার মধ্যে আমরা একটি সুখবর দিতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘যদি এটি সচল করার উপযোগী না হয়, তাহলে ট্রান্সফরমারটি পুনঃস্থাপন করার জন্য আরেকটি ট্রান্সফরমার আনার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি ঢাকা থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।’
তবে পিডিবির প্রতিদিনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোন লোডশেডিং ছিল না। শুধু চট্টগ্রাম নয় দেশের কোথাও লোডশেডিং ছিল না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বামীর করা যৌতুকের মামলায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
পরবর্তী নিবন্ধগরুর জন্য ঘাস নিয়ে বাড়ি ফেরা হল না মুক্তার