লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি

চকরিয়ার বনাঞ্চলে চলছে কলা গাছ ও ঘাসের চারা রোপণ কার্যক্রম

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় খাবারের সন্ধানে প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্য হাতি। সংরক্ষিত বন উজাড় ও দখল, বন্য হাতির অভয়ারণ্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে ফেলাসহ বনের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী কর্তৃক ক্রমাগত চাপের কারণে আবাসস্থল হারিয়ে অনেকটাই ছন্নছাড়া বন্য হাতি। এসব কারণে প্রতিনিয়ত খাবারের জন্য লোকালয়ে দেখা মিলছে বন্য হাতির।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সংরক্ষিত বন উজাড়সহ আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বন্য হাতি লোকালয়ে চলে আসায় প্রতিনিয়ত হাতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ছে মানুষের। এতে বন্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা পড়া ছাড়াও মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতিও বাড়ছে।

গত একমাস ধরে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুরমানিকপুর ইউনিয়নের লোকালয়েও প্রতিনিয়ত হাতির পাল বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। দিনের বেলায় পাহাড়ের ভেতর অবস্থান করলেও রাতের অন্ধকারে বন্য হাতির পাল চলে আসছে লোকালয়ে। একমাস ধরে বন্য হাতির পাল রাতের আঁধারে লোকালয়ে চলে আসার সত্যতা নিশ্চিত করে সুরাজপুরমানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘নানা কারণে বন্য হাতির পাল লোকালয়ে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের আঁধারে প্রতিনিয়তই দেখা মিলছে একদল হাতির। বন্য হাতির এই পালটি মানিকপুর সড়কের পাশেও ফসলি জমিতে প্রতিনিয়ত দেখা মিলছে।’চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে বনবিভাগ ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) এবং ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারদের সতর্ক পাহারায় রাখা হচ্ছে, যাতে বন্য হাতির পাল মানুষ এবং ঘরবাড়ির ক্ষতি করতে না পারে।’

এদিকে বনাঞ্চলে হাতির খাদ্য বাড়াতে বনবিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। তন্মধ্যে রয়েছে বন্য হাতির অভয়ারণ্য এলাকায় কলা গাছ ও ঘাসের চারা রোপণ কার্যক্রম।

কঙবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ সূত্র জানায়, বনের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠি কর্তৃক বনজ সম্পদের উপর ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রয়েছে। এই কারণে সংরক্ষিত বন ও বন্য হাতির অভয়ারণ্য তথা আবাসস্থল হারাচ্ছে বন্য হাতি। এই পরিস্থিতিতে অল্প কিছু জায়গায় আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে হাতির পালসমূহ। প্রতিনিয়ত হাতির আবাসস্থল সংকোচিত হয়ে যাওয়ার কারণে বনের ভেতর দেখা দিয়েছে হাতির খাদ্যাভাব। এই পরিস্থিতিতে নিয়মিত খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে হাতির পাল। লোকালয়ে নিয়মিত হাতি খাদ্যের সন্ধানে আসার কারণে হাতিমানুষ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ হাতি মারছে কিংবা হাতি মানুষের ওপর আক্রমণ করছেএমন ঘটনা নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রসঙ্গে কঙবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহরাজ উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বনের ভেতর অভয়ারণ্য ধ্বংস হওয়ায় প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে বন্য হাতি চলে আসায় আমাদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে বন্য হাতির সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তন্মধ্যে বন্য হাতি লোকালয়ে চলে আসলে বনকর্মী ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) দ্বারা হাতিকে বনের ভেতর ফেরানোর কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলমান রয়েছে। এছাড়াও হাতির আবাসস্থল এলাকায় হাতির খাদ্যের জোগান দিতে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’

বনবিভাগ জানায়, ইতোমধ্যে সিএমসির সহযোগিতায় বনের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীনস্থ পাঁচটি বনবিটের যেসব স্থানে বন্য হাতির আবাসস্থল ছিল সেখানে কলা গাছ ও ঘাসের চারা রোপণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রথমবারের মতো ফাঁসিয়াখালী বিটের বন্য হাতির অভয়ারণ্য এলাকায় রোপণ করা হয়েছে ৫০০ কলা গাছ ও ২০০০ ঘাসের চারা। এই প্রকল্প অন্যান্য এলাকায়ও বাস্তবায়ন করা হবে।

রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘সংরক্ষিত বন ও বন্য প্রাণী দেশের সম্পদ। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন, বন্য প্রাণী ও বনজ সম্পদ রক্ষা করতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় নোয়া গাড়ির ধাক্কায় টমটম চালক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধজোয়ার-ভাটার সময়সূচি