লোকজন থাকছে না আশ্রয়কেন্দ্রে

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ।। আত্মঘাতী হতে দেব না : বিভাগীয় কমিশনার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৮ জুন, ২০২১ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

ভারী বৃষ্টিতে ঝুঁকি এড়াতে পাহাড় থেকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তারা সেখানে থাকবেন না। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ফের যাচ্ছেন পাহাড়ে। ঘরে ঘরে লাগানো প্রশাসনের তালা ভেঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে ঢুকে পড়ছেন। এ চিত্র নগরীর মতিঝর্ণাসহ ১৮ টি পাহাড়ের। যেখানে যুগ যুগ ধরে অবৈধভাবে ঝুঁকি নিয়ে লোকজন বসবাস করে আসছেন। জেলা প্রশাসন জানায়, ভারী বৃষ্টি শুরু হলে গত রোববার নগরীর ১৮ পাহাড় থেকে প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে (আশ্রয়কেন্দ্র) সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু পরের দিন আশ্রয়কেন্দ্র ও পাহাড়গুলোতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, নিরাপদ আশ্রয়ে থাকছেন না তারা। আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা চলে যাচ্ছেন। এছাড়া অনেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের লাগানো তালা ভেঙ্গে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস করছেন। এ রকম ৩৫টি পরিবারকে গতকাল সোমবার দুপুরে সরিয়ে ফের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ১৮টি পাহাড়ের ৭ টি পয়েন্ট থেকে তাদেরকে সরানো হয়।
সাত পয়েন্টের পাহাড়গুলো হচ্ছে, সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরা পল্লি, সন্দীপ পাড়া আদর্শ গ্রাম, জঙ্গল সলিমপুর, লালখান বাজারের পোড়া কলোনী, একে খান পাহাড়, ডবলমুরিং এলাকার ডেবার পাড়, বায়েজিদ এলাকার মিয়ার পাহাড়, চট্টেশ্বরী রোডের টাংকির পাহাড়, ফরেস্ট হিল, বাটালি হিল ও মতিঝর্ণা। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ১৮ পাহাড়ের মধ্যে ৮ টি ব্যক্তি মালিকানাধীন ও ১০ টির মালিক সিডিএ, রেলওয়েসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থ্যা।
ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে লোকজনের অবস্থানের বিষয়টি চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজাদীকে বলেন, আমি রোববার যোগদান করেছি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত। ইতিমধ্যে লোকজনের উদ্যেশে মাইকিং করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা সেটি করছেও। লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা সতর্ক রয়েছি। আত্মঘাতী হতে দিব না। আমরা একটি স্পেশাল মিটিং করবো। এ মিটিংয়ের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান আজাদীকে বলেন, রোববার প্রথমদিন আমরা দেড়শ থেকে দুইশ পরিবারের প্রায় ছয়শ লোককে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিলাম। তাদেরকে খাবারসহ প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া হচ্ছিল সেখানে। কিন্তু তারা তাতে সন্তুষ্ট না। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতেই চাইছে না তারা। অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার গিয়ে এ চিত্র আমরা লক্ষ্য করেছি। আমাদের লাগানো তালা ভেঙ্গে অনেকে ঘরে ঢুকতে দেখেছি। তবে তাদেরকে আমরা ফের সেখান থেকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টাও ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমরা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে মাইকিং করছি। যাতে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঘরবাড়ি বানিয়ে তাতে লোকজনকে থাকতে দিচ্ছে কিছু ভূমিদস্যু। তাদেরকে উচ্ছেদ করতে গেলে তারা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে। বর্তমানে এরকম বেশ কয়েকটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অনেক পাহাড়ের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। তাই আমরা পাহাড়গুলো থেকে বসতি উচ্ছেদ করতে পারছি না। আমরা তা করলে আদালত অবমাননার সামিল হবে। তবে আমরা বসে নেই। জীবন বাঁচাতে অভিযান চালিয়ে লোকজনকে আমরা সরিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিম্মায় নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠাচ্ছি। তিনি বলেন, লালখান বাজারের মতিঝর্না এলাকার পাহাড়ে ৭ তলা ভবনও রয়েছে। এ ভবনও বিষয়েও উচ্চ আদালতে একটি রিট রয়েছে। এসব রিট চলমান থাকলে সমস্যা সমাধান হবে না।
জেলা প্রশাসন জানায়, গত রোববার তারা নগরীর মতিঝর্না পাহাড়, বায়েজিদ এলাকার মিয়ার পাহাড়, ফয়’স লেক এলাকার ঝিল ১, ঝিল ২, ঝিল ৩ পাহাড় ও পলিটেকনিক এলাকার বেশ কয়েকটি পাহাড় ও বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড এলাকার পাহাড়, বিশেষ করে বিজয় নগর, মধ্যম নগর, শান্তিনগর নামের পাহাড়, লালখানবাজার পোড়া কলোনী, ঢেবারপাড়, একে খান পাহাড়, বাটালি হিলে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে প্রায় ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট ১৮ টি পাহাড়ের দেড়শ থেকে দুইশ পরিবারের ছয়শ লোকজনকে সরিয়ে ১৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র নেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের করা তালিকা অনুযায়ী ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র হলো- পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্ব কলোনীতে কোয়াড-পি ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিরোজশাহ কলোনী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বায়তুল ফালাহ আদর্শ মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জালালাবাদ বাজার সংলগ্ন শেড, রৌফাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, রশিদিয়া রউফাবাদ আলিম মাদ্রাসা, মহানগর পাবলিক স্কুল, আল হেরা মাদ্রাসা, আমিন জুট মিল ওয়ার্কাস ক্লাব, আমিন জুট মিল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লালখানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবাদউল্লাহ পণ্ডিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীনগর সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, কলিম উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াইডব্লিওসিএ, শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মতিঝর্না ইউনিসেফ স্কুল।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী ১৮টি পাহাড়ে ১৬শ অবৈধ বসতি ছিল। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের নেতৃত্বাধীন উচ্ছেদ কমিটি ৮৩৫ টি বসতি উচ্ছেদ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে পানির স্তর ছিল নিচে অথচ খালগুলো ছিল পরিপূর্ণ
পরবর্তী নিবন্ধআসামি পিতা-পুত্রকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার