মীরসরাইয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে লেবু চাষ। গত কয়েক বছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। চলতি বছর চাষ হয়েছে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় বছরের ব্যবধানে মীরসরাইয়ে লেবু চাষ বেড়েছে ৫ হেক্টর। পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিসের তদারকি ও কৃষকদের আগ্রহে এই উপজেলায় ধীরে ধীরে লেবু চাষ বাড়ছে বলে দাবি করেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
মীরসরাই কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মীরসরাইয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে এবছর ৫০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। শুধু করেরহাট ইউনিয়নের চাষ হয়েছে ২৩ হেক্টর লেবু। সরেজমিনে করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা, কালাপানি ও সাইবেনীখীল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাার ধারে পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি লেবু বাগান। করেরহাট এলাকার অনেক বাগানে ও নির্ধারিত লেবু বিক্রির স্থানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ছুটে এসেছে লেবু কিনতে। লেবু কেনার জন্য বাগানের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী ঘর। পাইকাররা ওই ঘরে বসে চাষিদের সাথে সওদা করছেন। প্রতিদিন এসব স্থানে কয়েক লাখ টাকা লেবু বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বড় বাজারে দৈনিক আরো কয়েক লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়ে থাকে।
সাইবেনীখীল এলাকার লেবু চাষি ঊষা ত্রিপুরা জানান, প্রায় ১২ বছর আগে ২০০টি কলবী লেবুর চারা গাছ কিনে রোপণ করেছিলেন। প্রত্যেকটি চারা গাছে দাম পড়েছিল ১০ টাকা। গাছগুলো লাগানোর ২ বছর পর থেকে ফলন দেয়া শুরু করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে তার কাছ থেকে লেবু কিনে নিয়ে যায়। লেবু চাষ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। তিনি ৩ একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন। চলতি বছর প্রায় ১ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। এছাড়া বাগানে কয়েক লাখ টাকার লেবু রয়েছে। প্রতি বস্তা লেবু বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। এক বস্তায় লেবু থাকে নয়শটি মত।
কুমিল্লার লাকসাম থেকে আসা লেবু ক্রেতা মোতালেব জানান, করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত লেবুর সুনাম রয়েছে। তিনি ঊষা ত্রিপুরা থেকে বস্তা ভর্তি লেবু কিনে কুমিল্লা শহরসহ বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। এখানে তার মতো অনেক পাইকার লেবু কিনতে আসে বলে জানান তিনি। এছাড়া লেবু চাষি করেরহাট ইউপি মেম্বার জামাল উদ্দিন বলেন, আমি মূলত একজন কৃষক। গত ৬ বছর ধরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করে থাকি। প্রতি বছর খরচ গিয়ে আমার দুই লাখ টাকা লাভ থাকে।
মীরসরাই কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, মীরসরাইয়ে সবচেয়ে বেশি লেবু চাষ হয় করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলে। এবছর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। লেবু চাষে বাগান স্থাপনে খরচ বেশি। তবে বাগান তৈরি হয়ে গেলে খরচের তুলনায় বেশি লাভ হয়। কৃষকদের চাহিদা মতো আমরা সকল সহযোগিতা সবসময় করে থাকি।
