মনের মতো সাজ, বিড়াল এল প্রদর্শনীতে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

ইট, কাঠ, পাথরে ঢাকা এই শহরে পশুপাখিরা অবহেলায় দিন কাটায়। পথে তাদের দেখলেই ঢিল ছোড়া হয়, খাবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে পিঠে পড়ে লাঠির বাড়ি। কখনো ছুঁড়ে মারা হয় গরম পানি। সেই শহরেই চলছে ব্যতিক্রমী এক বিড়াল প্রদর্শনী। সযত্নে লালিত বিড়ালদের মনের মতো করে সাজিয়ে সেখানে নিয়ে এসেছেন তাদের অভিভাবকেরা।
চারপেয়ে পোষ্য প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল খুবই আদুরে। মায়াময় অঙ্গভঙ্গি আর মিউ মিউ ডাকে সারাক্ষণই থাকে আবদারের সুর। তাই বিড়ালপ্রেমীরা তাদের যত্ন করে সাজিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকে। বিড়ালের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়াতে নগরীর খুলশীর ওয়ারলেস মোড়ে গতকাল শুক্রবার ছোট্ট পরিসরে বিড়াল প্রদর্শনীর আয়োজন করে বার্ডস অ্যান্ড পেট অ্যানিম্যাল ক্লিনিক। আয়োজকরা জানিয়েছেন, বিড়াল ছোট বড় সবাইকে আনন্দ দেয়। ইঁদুর খেয়ে খাদ্যশস্য, গৃহস্থালি সামগ্রী ও দোকানের পণ্যসামগ্রী সুরক্ষায় সাহায্য করে। প্রদর্শনীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সহযোগিতা করেছে এসিআই এনিম্যাল হেলথ্‌ ডিভিশন বাংলাদেশ।
স্বল্প পরিসরে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা যায়, আয়োজকদের ভুল প্রমাণিত করে বিড়াল দেখতে হাজির হয়েছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। লিও, এঞ্জেল, ভুতু, মিনি, আদর, পুষি, জোজো, টুকু, টাইগার নাম ধরে ডাকলেই ঘাড় ফিরিয়ে সাড়া দেয়। চোখ বড় বড় করে তাকায়। তা দেখে দর্শনার্থী, বিশেষ করে শিশুরা সরতেই চায় না বিড়ালের সামনে থেকে।
সুমাইয়া সিদ্দিকীর নিয়ে আসা বিড়াল ‘লিও’র চোখে চশমা। ফাহমিদা চৌধুরীর বিড়াল ভুতুর গলায় ঘণ্টা। পরনে দামি বেল্ট, বাহারি সাজ সজ্জাতো আছেই। কেউ বিড়ালকে আদর করছে, কেউ আবার ব্যস্ত সেলফি তুলতে। দেশি-বিদেশি বাহারি জাতের শতাধিক বিড়ালের মেলা বসেছিল কাল। শুধু প্রদর্শনী, র‌্যাম্প শো নয়, বিনামূল্যে এসব বিড়ালের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে পরামর্শ।
টেবিলের ওপর প্রিয় বিড়াল এঞ্জেলকে রেখে আদর করছিলেন লাইহা। দর্শনার্থীরা আদর করতে চাইলে তাদের সুযোগ করে দিতে নিজে একটু সরে যান। দর্শনার্থীরা মাথায়, সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। এঞ্জেল আদর খাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু এদিক ওদিক খুঁজছিল লাইহাকে। মনে হচ্ছিল আদর যারা করছিল, তারা ঠিক লাইহার মতো আদর করতে পারছিল না।
কোলে নিজের পোষা বিড়াল নিয়ে এসেছেন কলেজ ছাত্র অনিক চৌধুরী। তিনি বলেন, বিদেশি বিড়ালের পাশাপাশি দেশি বিড়ালও আছে আমার। একেকটি বিড়ালের বৈশিষ্ট্য আলাদা। তাদের পছন্দের খাবার, যত্নও আলাদা। আশার কথা হচ্ছে চট্টগ্রামে পোষা পশু-পাখির চিকিৎসার জন্য হাতের কাছে সিভাসু আছে। অনিক যখন নিজের পোষা বিড়ালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন অন্য বিড়ালের অভিভাবকেরা যত্ন নেওয়ায় ব্যস্ত। কেউ চিরুনি দিয়ে বিড়ালের পশম আঁচড়ে দিচ্ছেন, কেউ পানিকে আদর করে ‘মাম’ বলে বিড়ালের মুখে তুলে দিচ্ছেন। কেউ আবার বিড়াল কোলে বসিয়ে নেইলকাটার দিয়ে নখ কেটে দিচ্ছেন। ঠিক যেন নিজের সন্তানকেই লালনপালন করছেন তাঁরা।
প্রদর্শনী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. এ.কে.এম. হুমায়ুন কবির, চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন।
র‌্যাম্প শোতে দেশি-বিদেশি তিনটি জাতের ১৫টি বিড়াল অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে সেরা তিনটি পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছে। বিচার কাজ পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ভজন চন্দ্র দাস, ড. মোহাম্মদ ইউসুফ এলাহী চৌধুরী ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ান পাশা।
প্রদর্শনীতে শতাধিক পোষা বিড়ালের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বার্ডস অ্যান্ড পেট অ্যানিম্যাল ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিড়াল পালনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে বিড়াল পালনের মাধ্যমে শিশুদের মানসিক বিকাশ উন্নত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতাকে কাজে লাগাতে ও প্রাণির প্রতি মানুষের ভালোবাসা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বার্ডস এন্ড পেট এনিম্যাল ক্লিনিক’ বিড়াল প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
পুরস্কার বিতরণে উপস্থিত ছিলেন নাহার এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রকিবুর রহমান টুটুল, এসিআই এনিম্যাল হেলথ্‌ এর পরিচালক ডা. মো. আমজাদ হোসেন। উক্ত প্রদর্শনীতে আনুমানিক আট হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলেবু চাষে লাভ বেশি
পরবর্তী নিবন্ধবিয়ের দেনমোহর ১০১টি বই