লেনিন(১৮৭০–১৯২৪)। বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। রুশ বিপ্লব ও সোভিয়েত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রগণ্য এক ব্যক্তিত্ব লেনিন। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের তিনিই ছিলেন প্রধান নায়ক। মার্কসীয় রাষ্ট্রচিন্তার অনুসরণে রাজনীতি–সমাজনীতিতে লেনিনের অবদান অপরিসীম। লেনিনের পূর্ণ নাম ভ্লাদিমির ইলিচ ইলিয়ানভ লেনিন। তিনি ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল এপ্রিল ভলগা নদী তীরের শহর সিমর্বিস্ক–এ জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। রুশ সম্রাটকে হত্যাচেষ্টার অপরাধে বড় ভাই আলেকজান্দারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তরুণ ছাত্র লেনিনের মনে তা গভীরভাবে রেখাপাত করে। ছাত্রাবস্থায় শ্রমিক নেতা প্লেখানভ এবং মার্কস ও এঙ্গেলসের রচনার নিবিড় চর্চা শুরু করেন লেনিন। পরবর্তীসময়ে পুরোপুরি নিবেদিত হয়ে পড়েন সর্বহারা বিপ্লবে। স্থানীয় মার্কসবাদীদের সংগঠিত করে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাঁকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত হতে হয় কিছুদিনের জন্য। বিপ্লব ও আন্দোলনের মূল ভাবধারা প্রচার, জনমত তৈরি ও সংগঠনের উদ্দেশ্যে লেনিন ‘ইসক্রা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন, যার অর্থ ‘স্ফুলিঙ্গ’। বহুল প্রচারিত এই পত্রিকাটি রাশিয়ায় মার্কসবাদী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ করতে বিরাট ভূমিকা রাখে। এরপর দেশে ফিরে গোপনে বিপ্লব পরিচালনা করতে থাকেন লেনিন। ১৯০৬ সালে রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বলশেভিক পার্টির জন্ম হলে লেনিন নেতৃত্বে আসেন বলশেভিক দলের।
১৯১৭ সালে দুনিয়া কাঁপানো রুশ বিপ্লবে প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী লেনিনের নেতৃত্বেই কেরেন্সকি সরকারের পতন ঘটে, আসে সর্বহারা একনায়কত্ব। সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিশ্বের বুকে। সোভিয়েত সরকারের প্রধান হিসেবে লেনিন জার্মানির সাথে শান্তি চুক্তি করেন। অন্যান্য দেশের সাথেও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি গৃহীত হয়। সারা দেশে শুরু হয় উন্নয়ন আর অগ্রগতির প্রচেষ্টা। মার্কসীয় মতাদর্শে লেনিন তাঁর রাজনৈতিক ও দর্শন চিন্তা তুলে ধরেন তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সাম্রাজ্যবাদ: পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’, ‘বস্তুবাদ ও হাতুড়ে সমালোচনা’, ‘দার্শনিক নোটবই’, ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ প্রভৃতি। ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি লেনিন মৃত্যুবরণ করেন।