লেখালেখি বিষয়ক কর্মশালা

শামীম ফাতেমা মুন্নী | সোমবার , ৩০ মে, ২০২২ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

 

 

চট্টগ্রাম একাডেমির ফয়েজ নুরনাহার মিলনায়তনে গত ২৭ মে আয়োজিত হয় লেখালেখি বিষয়ক কর্মশালা। গুণী এবং বিদগ্ধ আলোচক কবি ময়ুখ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি সুজন বড়ুয়া এবং কবি রাশেদ রউফের মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ মনোমুগ্ধকর আলোচনা নিবিষ্ট হয়ে শুনছিলেন অতিথি এবং অংশগ্রহণকারী সুধীবৃন্দ। আমাদের জানার বাইরেও যে জগত আছে, তা আমাদের স্বীকার করতেই হয়। এই কর্মশালায় আমরা শুনেছি, জেনেছি, শিখেছি এবং অজানাকে জানার তৃষ্ণায় সংকোচ ছেড়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছি অনেকেই। শ্রদ্ধেয় আলোচকরা সাধ্যমতো চমৎকার উপমায় উত্তর দিয়েছেন আমাদের। একজন কবি রাশেদ রউফের কথায় প্রতিধ্বনিত হয় কবিতার অভিন্ন কোনো সংজ্ঞা নেই। দান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “সুরে বসানো কথাই হচ্ছে কবিতা।” সবটুকু কথা কবিতায় ভাঙতে নেই, কবিতা তখনই কবিতা হয়ে ওঠে যখন না বলা কথা বাঙ্‌ময় হয়ে ওঠে সেই কবিতায় ।

সুর, তাল, লয় মাখানো ছন্দের বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি মাত্রাকে ভেঙে চমৎকার ভাবে বুঝিয়েছেন, মুগ্ধতা ভরা তাঁর কবিতা ও ছন্দের ক্লাশটি ছিলো এককথায় অনবদ্য। লিখতে হলে পড়তে হবে তার দ্বিগুণ, লিখাকে ভালোবেসেই লিখে যেতে হয় মন থেকে। যারা শুনেছেন, আশা করি ভীষণ উপকৃত হবেন। শব্দরাশিকে বশীভূত করার মন্ত্রের দীক্ষাও যেন পেলাম গতকাল এই জ্ঞানী গুনীদের আলোচনায়। কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী তাঁর সুন্দর কথামালায় অনেক হৃদয়গ্রাহী ছোট গল্পের সারাংশ ভেঙে বোঝালেন, প্রথমেই প্লট ভেবে ভাষার প্রাঞ্জল বিস্তার ঘটিয়ে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কোনো শাখা প্রশাখা তৈরি না করে সে বিষয়ের ওপরই গল্পটি এমনভাবে শেষ করতে হবে যাতে শেষ হয়েও হলোনা শেষ মনের মাঝে এমন অনুরণন রেখে যায়। মাঝখানে ভরাট করতে প্রকৃতি কিংবা পরিবেশকে ব্যবহার করা যেতে পারে অনায়াসেই। সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি ময়ুখ চৌধুরীর সাথে আড্ডায় প্রশ্নোত্তরে তাঁর জ্ঞানের গভীরতায় যেন সাঁতার কাটলো উপস্থিত সবাই ।

তাঁর সহজ সরল কথায় মন্ত্রমুগ্ধ কর্মশালার ছাত্র ছাত্রী -“ লেখা বড় হওয়ার দরকার নেই, প্রয়োজন গভীরতার।” কবি সুজন বড়ুয়া তো ক্রিস্টোফার কলম্বাসের উদাহরণ দিয়ে বলেই দিলেন, লেখালেখিটা হচ্ছে কলম্বাসের সমুদ্র অভিযানের মত, যত লিখবেন ততই আবিষ্কার করবেন নতুন কিছু। যতই শুনেছি ততই যেন সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের সীমিত জ্ঞান।

গল্পকার বিপুল বড়ুয়া ও আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ছোটগল্প সম্পর্কে, . উদিতি দাশ সোমাও চমৎকার শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন শ্রদ্ধেয় ময়ুখ চোধুরী স্যারকে নিয়ে, সত্যিই দারুণ উপভোগ করেছি আমরা। এক আনন্দঘন পরিবেশে আলোচনা শেষে , ফটোসেশন শেষে গল্পকার মিলন বণিক দাদার জন্মদিনের কেক কাটার মাধ্যমে সফল এই লেখালেখি বিষয়ক কর্মশালার সমাপ্তি হয় , তখন ঘড়ির কাঁটা নয়টা পেরিয়ে গেছে সকলের অজান্তে। আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি চট্টগ্রাম একাডেমিকে, সীমিত পরিসরে হলেও এমন অনন্য অনবদ্য আয়োজনের জন্য। আগামীতে আরো চাই এমন প্রাণবন্ত জ্ঞানগর্ভ আয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবড় কঠিন হয়ে পড়েছে রাজনীতি
পরবর্তী নিবন্ধজলবায়ু পরিবর্তন : সতর্ক হওয়ার এখনই সময়