জলবায়ু পরিবর্তন : সতর্ক হওয়ার এখনই সময়

এমরান হোসাইন | সোমবার , ৩০ মে, ২০২২ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

 

 

জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জ শব্দটির সাথে কমবেশী সবাই পরিচিত। শব্দটি শুনতে অনেকের মধুর মনে হলেও এর ক্ষিপ্রতা নিয়ে বেশীর ভাগ মানুষ থোরায় তোয়াক্কা করেননা। পরিবেশের ওপর মানবসৃষ্ট অত্যাচারে আগামী শতাব্দীর শেষের আগে দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলটির প্রাণীকূলের জীবন আক্ষরিক অর্থএ অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে বলে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছেন বিশ্বপরিবেশবিদগণ।

দক্ষিণ এশিয়া জলবায়ু পরিবর্তনে প্রথম সারিতে রয়েছে এ খবর সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোষ্ট এ ছাপা হয়েছে। জলবায়ু বিজ্ঞানরা এ নিয়ে সতর্ক করেছেনপাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলটি গ্রহের উঞ্চতা বৃদ্ধির বিপর্যয়কর প্রভাববৃদ্ধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে এখানে দীর্ঘতর উত্তপ্ত তাপ তরঙ্গ (হিট ওয়েভ), অনিয়মিত বিপজ্জনক ঝড়সাইক্লোন এবং হিমালয়ের হিমবাহ গলে আকস্মিক বন্যার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর জাতিসংঘ আন্ত:সরকার প্যানেলের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সতর্ক করা হয়েছেবিশ্বে দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলটি জলবায়ু পরিবর্তনে এগিয়ে রয়েছে। একটি বাসযোগ্য এবং টেকসই ভবিষ্যত সুরক্ষায় সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত পদক্ষেপের সুযোগ রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে একটি জ্বলন্ত তাপপ্রবাহ উত্তর ভারত ও পাকিস্তানের কয়েক ডজন শহরে উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করেছে। যা ভবিষ্যত জলবায়ুর বর্তমান ইংগিত বলা যায়। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে তাপমাত্রা ১২০ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেছে। বেলুচিস্তানের আপেল ও পিচ গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন জানান, দিনের বেশীরভাগ সময় ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার কাজ করছে না। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভারতের কিছু অঞ্চলে, প্রায় অধেক গম ফসল মাঠ শুকিয়ে গেছে। ২০১০ সাল থেকে ভারতে তাপপ্রবাহে ৬৫০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে বলে জাতিসংঘের রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্যই, দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ১দশমিক ৫বিলিয়নেরও বেশী মানুষের মধ্যে মাত্র এক ভগ্নাংশের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস মহামারী, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানী খরচ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটে উল্লেখযোগ্য আঘাত বলে রিপোটে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বোম্বাইয়ের জলবায়ু গবেষক অর্রপিতা মন্ডল এমআইটি রিভিউকে বলেছেন, এ অঞ্চলের বেশীরভাগ মানুষ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে খুব কম আবদান রেখেছে। উন্নত বিশ্বের এক বৃহৎ অংশের লোকজন এসব নিউজকে স্রেফ কাগুজে খবর বা গুজব বলে উড়িয়ে দেন। এক জরিপে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ৭০শতাংশ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত। আমেরিকা মহাদেশে প্রতিবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়েআন্তঃসরকারি প্যানেলের একটি রিপোর্টএ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া, প্রায় এক দশকের মধ্যে গ্রহের উষ্ণতা বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রধান বিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্যাথারিন হেহো বলেনজলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গরমের দিন, প্রচণ্ড সুপারস্টর্ম এবং শক্তিশালী বন্যা, ক্ষতিগ্রস্ত বন, জলাভূমি, কৃষিজমি এবং ফসল, বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তি এবং জলবায়ু বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের হুমকিতে ফেলেছে। আমাদের বায়ুমণ্ডলে নিঃসৃত কার্বনের ক্রমাগত বৃদ্ধি শুধুমাত্র অনেককেই হতাশ করেনি, বরং বিজ্ঞানীদেরও হতাশাগ্রস্ত করেছে। ব্রাসেলস শিপিং প্রোগাম ডিরেক্টর ট্টান্সপোটেশন এন্ড এনভাইরনমেন্ট এর রিপোর্টএ উল্লেখ করা হয়েছেসাংহাই থেকে লসএন্‌েজসবৈশ্বিক শিপিংয়ের জলবায়ুর প্রভাব জার্মানির মোট অর্থনীতির চেয়ে বড়, এবং জাপানের চেয়ে একটু কম। বৈশ্বিকশিপিং প্রতি বছর এক গিগাটন কার্বন ডাই অঙাইড উৎপন্ন করে। এব্যাপারে বৈশ্বিক সমুদ্রপথ নিরাপদ ও দূষণমুক্ত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ সাল নাগাদ বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে শুরু করবে। কিন্তু সমস্ত শিপিং কাবর্নমুক্ত করতে ২০৫০ সাল নাগাদ সময় লাগতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান বিষয়ক রিপোর্টার কোরে এস.পাউয়েল জানান। ফরাসি বিকল্প শক্তি এবং পারমাণবিক শক্তি কমিশনের জলবায়ু ও পরিবেশ বিজ্ঞান গবেষণাগারের গবেষক ফিলিপ সিয়াস দেখেছেন যে ধনী এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশ সহ বিশ্বের কিছু শীর্ষ নির্গমনকারীরা তাদের নির্গমনকে অবমূল্যায়ন করছে। মানবতার অবিরাম ক্রিয়াকলাপের দ্বারা নির্গত গ্রীনহাউস গ্যাসগুলি ক্যাটালগ করা কঠিন: এগুলি অদৃশ্য, এবং সেগুলি আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি দিক দ্বারা উৎপাদিত হয়। আমরা যে বাড়িতে থাকি, আমরা যে যানবাহন চালাই, আমরা যে খাবার খাই, আমরা যে পণ্যগুলি কিনি সবই বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউস গ্যাসের বোঝা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রাখে।

নির্গমনের সিংহভাগ আসে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে, যা যুক্তিসঙ্গত নির্ভুলতার সাথে মেলানো যেতে পারে। কিন্তু এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সহজে ট্র্যাক করা যায় না, যার মধ্যে যে নির্গমন ঘটে যখন বন কেটে ফেলা হয় বা আগুনে হারিয়ে যায়, পিটল্যান্ডগুলি নিষ্কাশন হয়, বা কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত সার ছড়িয়ে পড়ে। সবমিলে বলা যায়, ভালোবাসার এ পৃথিবীকে যারা ভালোবাসবে, তারা ভালো থাকবে, যারা ভালোবাসবে না জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তাদেরকে ছাড় দেবে না বলে বিশ্বপরিবেশবিদের আগাম সতর্ক করেছেন।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধলেখালেখি বিষয়ক কর্মশালা
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : প্রতিকার কোথায়