লেখক-প্রকাশক-পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ হোক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একুশে বইমেলা

| বুধবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

আজ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩। নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে ২১ দিনব্যাপী এবারের মেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও স্টলের সংখ্যা দুটোই বাড়ছে বলে আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। বহুদিন ধরে চট্টগ্রামের সাহিত্যকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, বইপ্রেমী নাগরিকদের একটা দাবি ছিলো ‘অভিন্ন বইমেলা’ আয়োজনের, ফেব্রুয়ারি মাসে ভিন্ন ভিন্নভাবে না করে অভিন্নভাবে বইমেলা করার। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এ উদ্যোগ রীতিমতো প্রশংসনীয়। এতে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক, পাঠকসহ বইপ্রেমীদের স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। আজাদীতে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৯ সালে সম্মিলিত উদ্যোগের এই অভিন্ন বইমেলার যাত্রা শুরু হয়। মেলা ঘিরে তখন স্বপ্ন দেখেন প্রকাশকগণ। আশা ছিল মেলাকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়াবে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্প। ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হবে হারানো ঐতিহ্য। তবে দুই বছর ধারাবাহিকতা থাকলেও ২০২১ সালে করোনার কারণে বইমেলা আয়োজন করেনি চসিক। ফলে বইমেলা ঘিরে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের প্রসারে যে যাত্রা তা কিছুটা থমকে যায়। যা স্পষ্ট হয় ২০২২ সালে। ওই বছর পূর্বের চেয়ে বিকিকিনি কমে যায়’। আমরা আশা করবো, এবার বইয়ের বিকিকিনি বাড়বে।

আমরা জানি, বোধের তাড়নায় ও বুদ্ধির প্ররোচনায় সাহিত্যিকরা কলম ধরেন। কিন্তু সব সাহিত্যকর্ম আলোর মুখ দেখে না। তার দুটো কারণ: একটি লেখকের সংকোচ বা আড়ষ্টতা; অন্যটি প্রকাশের সুযোগের অভাব। চট্টগ্রামের বর্তমান প্রকাশকরা লেখকের সংকোচের জায়গায় আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করেন এবং গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সুযোগ করে দেন। এঁদের কল্যাণে চট্টগ্রামে এমন কোনো লেখককে পাওয়া যাবে না, যিনি এখনো অগ্রন্থিত আছেন, অর্থাৎ যার কোনো বই প্রকাশ হয় নি। গভীর নিষ্ঠা ও যত্নকে ধারণ করে চট্টগ্রামে অবস্থানরত লেখকদের বই এঁরা প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় যে, চট্টগ্রামে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তত সংকুচিত হচ্ছে চট্টগ্রামের বইয়ের বাজার। এক্ষেত্রে এই বইমেলা চট্টগ্রামের প্রকাশকদের বড় অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করেন চট্টগ্রামের পাঠকের মনে যে হাহাকার বিরাজ করছে, তা মেটাতে। অতৃপ্তি ও তৃষ্ণায় কাতর পাঠকদের মন জয় করতে চট্টগ্রামের প্রকাশকদের সাথে সাথে ঢাকার নামীদামি বেশ কিছু প্রকাশনা সংস্থাকে নিয়ে আসা হচ্ছে এই মেলায়। বইমেলায় হাতের নাগালে একসাথে পাওয়া যায় সাহিত্যের সকল ভাণ্ডার। ফলে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের পড়ার বাইরে নানা স্বাদের বই সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ পায়। তাদের চিন্তায় জ্ঞানের নতুন তৃষ্ণার জন্ম হয়। সব বয়সের পাঠকরা মেতে উঠতে পারেন জ্ঞানসমুদ্রের সীমাহীন জ্ঞানাহরণে। তাই জাতীয় মেধা ও মনন গঠনে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।

অমর একুশে ও ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকায় যে স্বতঃস্ফূর্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তা এককথায় প্রশংসনীয়। কেননা, একে ঘিরে গল্পকবিতাউপন্যাসপ্রবন্ধশিশুসাহিত্যসহ সৃজনশীল লেখনী শিল্প ও প্রকাশনা শিল্পের সুবিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে দেশে, যার অর্থনৈতিক ব্যাপ্তি ও পরিধি কম নয়। এর জন্য বাংলা একাডেমিকে অবশ্য ধন্যবাদ জানাতে হয়। বাংলা একাডেমির বইমেলার আদলে এই বইমেলা চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হোকসেটাই তাঁরা চান। আমরা চাই, পুরো দেশের মানুষ যেভাবে অপেক্ষা করেন বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার জন্য, ঠিক তেমনিভাবে চট্টগ্রামের পাঠকরাও একুশের বইমেলার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকবেন।

বইমেলার আয়োজনের দায়িত্ব মূলত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নয়। তবু বইয়ের প্রচার প্রসারে সিটি করপোরেশন যে আন্তরিকতাপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তারজন্য সিটি মেয়র ও সংশ্লিষ্টরা প্রশংসার দাবিদার। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মেলার স্টল, সাজসজ্জা, সেমিনার, কবিতা উৎসব, ছড়া উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশসহ নানা আয়োজনে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনকে সম্পৃক্ত করে অভিনন্দন কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। তবে ইতোপূর্বে দুয়েক বছর পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রেই শুধু দায়িত্বশীল মনোভাবের পরিচয় দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। যদিও কোনো পুরস্কারই বিতর্কের উর্ধ্বে থাকে না। তবু আমরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত যোগ্য লেখককে বাছাই করে পুরস্কার প্রদানের জন্য আহ্বান জানাবো। এক্ষেত্রে একটা নীতিমালা প্রণয়ন ও তা অনুসরণ করে জুরি বোর্ড গঠন করা দরকার বলে মনে করি। এসব ছোটোখাটো সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি এড়িয়ে বলা যায়, এ বইমেলা লেখকপ্রকাশকপাঠকের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে