লিচু বাগান ফেরিঘাট এই সচল এই অচল

স্থায়ী সমাধান হিসেবে একটি সেতুর আকুতি তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের

কাপ্তাই প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ, আবাসন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুত গতিতে। পর্যটন সুবিধার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্যাতি এখন সর্বত্র। বিপুল সংখ্যক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ভ্রমণ এবং বেড়াতে আসছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি বর্তমানে এক সুতোয় বাধা। কিন্তু এখানকার উন্নয়নের সকল গতি যেন থমকে যায় লিচুবাগান ফেরিঘাটে এসে। এখানে ফেরির জন্য লোকজনকে অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। আবার ভারী বৃষ্টি হলে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এই অবস্থায় মানুষ নিত্য প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাতায়াতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এমতাবস্থায় স্থায়ী সমাধান হিসেবে এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, টানা কয়েক ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হলেই লিচুবাগানে অবস্থিত ফেরির পন্টুন পানিতে ডুবে যায়। তখন মানুষের যাতায়াত এবং যানবাহন চলাচলে বাড়ে চরম দুর্গতি। পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নদীর উপর সেতু নির্মিত হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর উপর লিচুবাগান ফেরিঘাটে একটি সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। প্রতিদিন শতশত যানবাহন এই লিচুবাগান ফেরিঘাট দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন ফেরিঘাটে নানা সমস্যা লেগেই থাকে। যে কারণে যানবাহন চলাচলে সবাইকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই ফেরি দিয়ে যানবাহন চলাচল করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির সময় ফেরির পন্টুন ডুবে যায়। অনেকে এই অবস্থায়ও ফেরিতে গাড়ি উঠানোর চেষ্টা করেন। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।
নারানগিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কান্তি জানান, বৃষ্টির সময় এই ফেরির উপরে যানবাহন তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কাপ্তাই লেকে পানি বাড়লে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ লেকের পানি ছেড়ে দিলে ফেরীর পন্টুনের অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। তখন টানা কয়েকদিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। যার ফলে হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উমেচিং মারমা বলেন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাজস্থলীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে লিচুবাগান ফেরিঘাটের গুরুত্ব অপরীসীম। এই ফেরিঘাট বন্ধ থাকলে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ থমকে যায়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের অনেক যানবাহনও প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু একইভাবে সবাইকে লিচুবাগান ফেরিঘাটে এসে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
কাপ্তাই মানবাধিকার কমিশনের মহিলা সম্পাদক নুর বেগম মিতা বলেন, লিচুবাগান ফেরিঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য গত ৩০ বছর ধরে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বহীন নদীর উপর সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ লিচুবাগান ফেরিঘাটের উপর কেন একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রতিমাসে একাধিকবার এই লিচুবাগান ফেরির উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। ফেরি পার হতে গিয়ে তাকেও মাঝেমধ্যে অপেক্ষায় থাকতে হয়। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে লিচুবাগান ফেরিঘাটের উপর একটি সেতু নির্মাণ করে সর্বস্তরের জনগণকে চরম দুর্ভোগের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ব মান দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধসংসদের টিকেট পেলেন শেরিফা কাদের