লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল অনুমোদন

ছাত্রছাত্রী ভর্তি আগামী মাসে ।। এই অর্জন মাইলফলক : সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

টানা প্রায় ৬০ বছরের সেবা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে ভিন্ন উচ্চতায় লায়নিজম। বিশ্বের চক্ষু চিকিৎসাসেবার অন্যতম বৃহত্তম সংগঠন লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল এবার চট্টগ্রামে আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে। নগরীর জাকির হোসেন রোডে চিটাগাং লায়ন্স ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সে শুরু হওয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালে এমএলওপি এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সাবস্পেশালিটি ফেলোশিপ কোর্স চালু করা হবে। আগামী বছর থেকেই এই ইনস্টিটিউটে ছাত্রছাত্রী ভর্তি শুরু হচ্ছে।

এই অনুমোদন হলো ‘স্বপ্ন ছোঁয়া’। লায়ন্স নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল একদিন শুধু দেশের চিকিৎসা সেবায় নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। চোখের চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী ভূমিকা রাখা লায়ন্স ক্লাবের এই উদ্যোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং টেকনিশিয়ান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গতকাল দুপুরে জাকির হোসেন রোডের লায়ন্স ফাউন্ডেশনের হালিমা তাহেরা মেমোরিয়াল হলে সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিটাগাং লায়ন্স ফাউন্ডেশনের (সিএলএফ) চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন নাসিরউদ্দিন চৌধুরী। চক্ষু বিষয়ক উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করায় সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২৩ সালের শুরু থেকে চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউটে এমএলওপি এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সাবস্পেশালিটি ফেলোশিপ কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হবে। এছাড়া জুলাই থেকে ডিপ্লোমা ইন অফথালমোলজি কোর্স পরিচালনায় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নাসিরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আই ক্যাম্প (চক্ষু শিবির), স্কুল সাইট স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম ও পারিবারিক স্বাস্থ্য পুষ্টি এবং শিক্ষা প্রকল্প সিটি সেন্টারে আধুনিক মানের হাসপাতাল-এই সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন ১৯৬৩ সাল থেকে সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগে অন্ধত্ব বিমোচন, দূরীকরণ ও চক্ষুরোগের চিকিৎসা পরিচালনা করে আসছে। সেবামূলক কার্যক্রম আরো আধুনিক, উন্নত ও প্রসারিত করতে ২০১৭ সালে লায়ন্স ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ এই হাসপাতালকে একটি রিজিওনাল সেন্টার অব এঙেলেন্স মানে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে অনুযায়ী অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়। যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল সমৃদ্ধ করে সাবস্পেশালিটি সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। মিড লেবেল, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও সাবস্পেশালিটিসহ বিভিন্ন কোর্স চালু করতে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সিএলএফ চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের অগ্রযাত্রায় সরকারি এই অনুমোদন অর্জন বিশাল মাইলফলক। কারণ এর মাধ্যমে এই ইনস্টিটিউট এখন থেকে চক্ষু বিষয়ক উন্নত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এই এলাকায় বিশ্বমানের আধুনিক চক্ষুসেবা প্রদানে, অন্ধত্ব বিমোচন ও দূরীকরণের কার্যক্রম এবং সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের দোড়গোড়ায় চক্ষুসেবা পৌঁছে দেয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, এই অর্জন সেই প্রচেষ্টাকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে। আরেকটি বিষয় হলো, চক্ষুসেবা কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকসহ সব ধরনের কার্যক্রমে নারীরাই সর্বত্র এগিয়ে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর চট্টগ্রামে একটা প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। এই ইনস্টিটিউটের সূচনা সেটা কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সহায়তা করবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এই হসপিটাল থেকে অসংখ্য গরিব রোগী সেবা নিয়েছেন। এখনো আপনারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, কোনো গরিব রোগী টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, আপনারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। এখন চিকিৎসক তৈরির জন্য আমরা আই ইনস্টিটিউট করেছি। এখানে আমরা চাইলেও বাণিজ্য করতে পারব না। আমাদের কোর্সগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে পরিচালিত হবে। উনারা আমাদেরকে যতজন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে বলবে, আমরা ততজন ভর্তি করতে পারব।

চট্টগ্রাম লায়ন্স আই হসপিটালের একাডেমিক ডিরেক্টর লায়ন অধ্যাপক ডা. প্রকাশ কুমার চৌধুরী বলেন, লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট থেকে দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হবে। এখানে এমএলওপি কোর্স থাকবে। এছাড়া ডিও, এমএস, বি-অপটম, ফেলোশিপ ট্রেনিং ও ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি সার্জিক্যাল ট্রেনিং থাকবে। আমাদের হসপিটালে রয়েছে বিশ্বের সেরা ফ্যাকো মেশিন। এছাড়া অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এখানে অনেক বড় বড় অপারেশন হচ্ছে। লায়ন্স হসপিটাল শুধু গরিবদের জন্য নয়, এখানে ধনীরাও আসতে পারেন। সবার জন্য রয়েছে একইরকম সেবা। এছাড়া আমরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মেরিন সিটির সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি। যেটার মাধ্যমে ওখানকার ছাত্রছাত্রীরা আমাদের অপারেশন থিয়েটারে এসে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন।

চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের এসোসিয়েট সেক্রেটারি লায়ন এসএম আশরাফুল আলম আরজুর সঞ্চালনায় এ সময় একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন এম এ মালেক, সাবেক জেলা গভর্নর ও সিএলএফের ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন কামরুন মালেক, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪-এর দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন কহিনুর কামাল, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন নাজমুল হক চৌধুরী, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪-এর সাবেক গভর্নর লায়ন মো. মোস্তাক হোসাইন, সাবেক গভর্নর লায়ন সিরাজুল হক আনসারি, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি লায়ন ডা. দেবাশীষ দত্ত, ট্রেজারার লায়ন এস জোহা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিরাপত্তা পরিষদে আবার সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়
পরবর্তী নিবন্ধ‘গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস’ হলেন প্রধানমন্ত্রী