বান্দরবানের লামায় উনিশ বছরের অবিবাহিত এক ত্রিপুরা প্রতিবন্ধী কিশোরী সন্তান প্রসব করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের নাজিরাম ত্রিপুরা পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।
পাড়ার কারবারি নাজিরাম ত্রিপুরা জানান, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী গ্রাম্য শালিশে সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ধর্ষক লিটন (৩২) থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে শুকর ক্রয় করে জবাই করে পাড়া শুদ্ধিকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া তাকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা আদায় করে প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবারকে প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করার জন্য ধর্ষক লিটন সময় নিয়েছে। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তান ও প্রতিবন্ধী কিশোরীর ভরণপোষণ চালানোসহ লালন পালন করবে সে।”
আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে ত্রিপুরা প্রথা অনুযায়ী এভাবেই এই ধর্ষণ ঘটনার বিচার শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারবারি।
ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোরী জানান, আজ থেকে ১০ মাস পূর্বে নাজিরাম ত্রিপুরা পাড়ার পাশে বেসরকারি একটি বিদ্যালয়ে রাতের বেলার অনুষ্ঠানে গেলে পাড়ার নিচে অবস্থিত যাত্রী ছাউনীতে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশী জুয়েল ত্রিপুরা ও গোদাইচন্দ্র ত্রিপুরা জানান, মেয়েটি খুবই অসহায়। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানটির পিতৃ পরিচয়ের স্বীকারোক্তি মেলেনি। সন্তানটির বয়স বর্তমানে ৪ সপ্তাহ চলছে। সন্দেহভাজন ধর্ষক হিসাবে আজিজনগর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হরিণমারা গ্রামের মৃত শামসুল হকের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. লিটনকে শনাক্ত করেছে এই প্রতিবন্ধী কিশোরী।
প্রতিবন্ধী কিশোরীর মা বলেন, “প্রতিবন্ধী হওয়ায় মেয়েটি ঘটনার সাথে সাথে বিষয়টি আমাদেরকে জানাতে পারেনি। ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে পাড়াবাসী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে বিষয়টি অবগত করানো হয়। আমরা গরীব ও অসহায়। আজ থেকে আনুমানিক ৩ মাস পূর্বে পাড়ার মহিলা মেম্বার ও কারবারি সহ ১০/১২ জন আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত থেকে এই ঘটনার বিচার করেছে। বিচারের জরিমানার টাকার মধ্যে আমরা ৫ হাজার টাকা পেয়েছি।
অভিযুক্ত অটোরিকশাচালক লিটন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমার বাম পা নেই। ষড়যন্ত্রমূলক আমাকে এই ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে।”
গজালিয়া ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার ও একই পাড়ার অধিবাসী সইততি ত্রিপুরা জানান, প্রতিবন্ধী কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি তার পরিবারসহ পাড়াবাসীর নজরে আসে। পরবর্তীতে পাড়ার কারবারি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে ত্রিপুরা প্রথা অনুযায়ী আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদে বসে ঘটনাটি সমাধান করা হয়েছে।
গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, “মহিলা মেম্বার কর্তৃক ঘটনাটি জানার পর সাথে সাথে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। ধর্ষিতার পরিবার মামলা করতে রাজি না হওয়ায় আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদে বসে পাড়ার কারবারি এবং প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবারের লোকজন ত্রিপুরা প্রথা অনুযায়ী ঘটনাটি মীমাংসা করেছে। আমরা বলেছি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া এই বিষয়টি সমাধানযোগ্য নয়।”
আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন জানান, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মামলা করার জন্য পরামর্শ দিলে তারা আইনগতভাবে না গিয়ে তাদের প্রথাগত নিয়মে সমাধান করেছে। পাড়ার কারবারি এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী গ্রাম্য শালিশ করেছে।”
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। মামলা করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।