ব্র্যান্ডন উই: Ebolusyon ছবিটার টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল পর্যন্ত পৌঁছানোর যাত্রা কেমন ছিল?
ল্যাভ ডিয়াজ: আমি ফিলিপাইনস ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য। যখনই কোনো ফেস্টিভ্যাল প্রোগ্রামার ফিলিপাইনে আসেন, গিল্ডের প্রেসিডেন্ট আমাদের জানিয়ে দেন যেন আমরা আমাদের কাজ প্রস্তুত রাখি। ২০০৪ সালের এপ্রিলে টরন্টো ফেস্টিভ্যালের স্টিভ গ্রাভস্টক ম্যানিলায় আসেন এবং সবার সাথে দেখা করার সময় ঠিক করেন। আমি তখন বলেছিলাম, আমার ছবিটা এখনো শেষ হয়নি–একটা রাফকাট আছে, প্রায় আট ঘণ্টার, এখনো কম্পিউটারে এডিটিং চলছে। তিনি বললেন, তাও তিনি দেখতে চান।
তাই তিনি এলেন আমার ছোট্ট স্টুডিওতে, গিল্ডের প্রধান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কার্লিতোস সিগিওন–রেনার সাথে, যিনি দোভাষীর কাজও করলেন কারণ অনেক অংশে তখনও সাবটাইটেল ছিল না। আমি আমার সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছিলাম, “৩০ মিনিটের মধ্যেই স্টিভ চলে যাবে।” সময় তখন বিকেল ৫টা। আমি একটু বাইরে গেলাম, রাত ৮টায় ফিরে দেখি– সে এখনো দেখছে। আবার বের হলাম, ১০টায় ফিরেও দেখি–এখনো দেখছে। আমি কফি আর চিজবার্গার এনে দিলাম। অবশেষে রাত ২টায় স্টিভ ছবিটা শেষ করে ধন্যবাদ জানালেন, বললেন এটা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমি তাঁকে আবার কফির প্রস্তাব দিলাম, কিন্তু তিনি বললেন তিনি শুধু ঘুমাতে চান।
দেশ ছাড়ার আগে তিনি আমাকে তাঁর ভিজিটিং কার্ড দিলেন। জুনের শেষ দিকে আমি তাঁর কাছ থেকে একটা ইমেইল পেলাম–তিনি লিখেছেন, আমি যেন ছবিটা পাঠাই, কারণ তিনি সেটাকে আমন্ত্রণ জানাবেন। আমি অবাক হলাম, কারণ তখনো ছবিটা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি একটি চূড়ান্ত কাট শেষ করতে পারব? আমি বললাম, যদি তিনি ফেস্টিভ্যালের শেষ দিকে ছবিটা রাখেন, তাহলে পারব। তিনি রাজি হলেন এবং দুই সপ্তাহ পর আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠালেন।
ব্র্যান্ডন উই: দুঃখজনকভাবে, তুমি তো ওই কাটটা হারিয়ে ফেলেছিলে। আসলে কী ঘটেছিল?
ল্যাভ ডিয়াজ: ২০০৪ সালের জুলাই মাসে Cinemanila International Film, Festival–এর সমাপনী হিসেবে ছবিটা দেখানোর এক সপ্তাহ আগে আমাদের কম্পিউটার ক্র্যাশ করে, আর সবকিছুই হারিয়ে যায়। চূড়ান্ত কাটটা–যার দৈর্ঘ্য ছিল দশ ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট–সম্পূর্ণ মুছে যায়। এটা ছিল ভীষণ বেদনাদায়ক–পাঁচ মাসের পোস্ট–প্রোডাকশন এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল। আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। সহকারী পরিচালক, যিনি একমাত্র মানুষ ছিলেন যিনি একটানা পুরো ছবিটা দেখে সংলাপগুলো ট্রান্সক্রাইব ও যাচাই করেছিলেন, তিনি ভেঙে পড়েন এবং হঠাৎ হারিয়ে যান।
আমাদের সামনে তখন পাহাড়সম কাজ। পুরো ১৫০ ঘণ্টার ফুটেজ আর সাউন্ড আবার নতুন করে কম্পিউটারে ডিজিটাইজ করতে হয়। পুরো ব্যাপারটাই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সবকিছু পুনরায় ডিজিটাইজ করতে পেরেছিলাম। সমস্যা ছিল, সাউন্ড মেশিনে এক ঘণ্টার মতোই সাউন্ড রাখা যায়–তাই কাজটা ভয়ানক ধীরগতির হয়ে গিয়েছিল। টরন্টোতে ছবির প্রথম প্রদর্শনের সময়ও আমি তখনো শেষের দিকের অষ্টম আর নবম অধ্যায় নিখুঁত করার কাজ করছিলাম–একটা ভীষণ ব্যয়বহুল স্টুডিওতে বসে।
ব্র্যান্ডন উই: Ebolusyon বাস্তবে তৈরি হতে এক দশক লেগেছিল। এর সূচনা আর বিকাশ কেমন ছিল?
ল্যাভ ডিয়াজ: ১৯৯৩ সালে আমি জার্সি সিটিতে এক ছোট ফিলিপিনো কমিউনিটি পত্রিকায় কাজ করতাম। জীবিকা চালাতে হতো, কারণ পরিবারকে দেশে টাকা পাঠাতে হতো। আমি তখন একটা চলচ্চিত্র করতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু যে গল্পটা তৈরি করছিলাম তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম–আরও ভালো বিষয় খুঁজছিলাম। আমার ঔপন্যাসিক বন্ধু এরিক গামালিন্দা, যিনি পত্রিকাটির সহ–সম্পাদকও ছিলেন, বললেন তাঁর একটা গল্প আছে–একজন ফিলিপিনো মানুষ নিউয়ার্কে জাহাজ থেকে লাফ দিয়ে পালায় এবং এক ফিলিপিনো রেস্টুরেন্টে কাজ নেয়, যেখানে মালিক তাকে শোষণ করে। লোকটা থাকে ম্যানহাটনের এক পুরনো ভবনে, আর সেখানে আছে এক ফিলিপিনো যুদ্ধ–প্রবীণের ভূত–যে লাল গোলাপ খায়। এটা ছিল একদিকে রোমান্টিক, অন্যদিকে সম্পূর্ণ অ্যাবসার্ড গল্প। কিন্তু আমি ভূতের লাল গোলাপ খাওয়ার ভাবনাটা দারুণ পছন্দ করেছিলাম। আমি এরিককে বললাম, এটা কি চিত্রনাট্যে রূপ দিতে পারবে? সে রাজি হলো এবং লিখতে শুরু করল।
আমরা প্রি–প্রোডাকশন শুরু করলাম ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে। মার্চ মাসে শ্যুটিং শুরু হয় লেক্সিংটন, নিউ জার্সিতে। আমাদের টিমটা ছিল একেবারে বিচিত্র–ইস্ট ভিলেজ আর জার্সি সিটির বন্ধুদের নিয়ে। রোল আর রেন্টালের জন্য টাকার ব্যবস্থা করেছিলাম আমার নিজের সঞ্চয় থেকে–ওয়েটার, পেট্রলপাম্প অ্যাটেনডেন্ট আর প্রুফরিডার হিসেবে কাজ করে। এক ফিলিপিনো পরিবার আমাদের সাহায্য করেছিল–খাবার,লোকেশন সব দিয়েছিল। আমি চিত্রনাট্যের প্রায় ৮০% বদলে ফেলেছিলাম, কিন্তু ভূত আর লাল গোলাপের মূল গল্পটা রেখেছিলাম। সেই দৃশ্যগুলো আমি শ্যুট করেছিলাম–অসাধারণ হয়েছিল।
কিন্তু তিন সপ্তাহ পর, সিনেমাটোগ্রাফারের সাথে ঝগড়া বাধে–তুচ্ছ বিষয় নিয়ে, যেমন ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল বা শ্যুটিংয়ের গতি। তাছাড়া, সে এমন কিছু মন্তব্য করেছিল যা আমার কাছে ফিলিপিনো চলচ্চিত্রকে অপমান করার মতো মনে হয়েছিল। তর্ক থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়, প্রায় একে–অপরকে মেরে ফেলেছিলাম। ফলে, ছবিটা সেইভাবেই শেষ হয়–একটা খুব নেতিবাচক পরিণতি দিয়ে।
যখন আমরা অবশেষে আবার শ্যুটিং শুরু করলাম, তখন সেই ফিলিপিনো পরিবারটা প্রজেক্ট ছেড়ে দিল। সহকারী ক্যামেরাম্যানই তখন ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফির কাজ নিতে বাধ্য হলো। আমার হাতে তখন কোনো টাকাই ছিল না। সবাই ভেতরে ভেতরে হতাশ হয়ে পড়েছিল, তাই কাজ বন্ধ হয়ে গেল। ছবির নেগেটিভগুলো ছিল সেই ফিলিপিনো পরিবারের বাড়িতে, তাই ওগুলো ফিরে পেতে অনেক সময় লেগেছিল–আমাকে অনুরোধ, অনুনয় করে তাদের রাজি করাতে হয় যেন ল্যাবরেটরিতে প্রসেস করা যায়।
আমি তখন নিউইয়র্ক সিটির ডু–আর্ট (DuArt) নামের একটি চলচ্চিত্র ল্যাবরেটরির ভাইস প্রেসিডেন্টকে লিখে অনুরোধ করলাম, যেন আমার রোলগুলো প্রসেস করে দেন। তিনি অবিশ্বাস্যভাবে দয়ালু মানুষ ছিলেন–আমি একেবারে নিঃস্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি রোলগুলো “ল্যাব” করে দিলেন। আমি তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম যেন ভিডিও ট্রান্সফারও দেন, যাতে আমি কিছু ফুটেজ কেটে একটা প্রেজেন্টেশন বানিয়ে সম্ভাব্য প্রযোজকদের দেখাতে পারি। তিনি সেটাও করে দিলেন, যদিও তাঁর বিলিং ডিপার্টমেন্ট তখন হুমকি দিচ্ছিল–যদি টাকা না দিই, তবে রোলগুলো পুড়িয়ে ফেলবে বা আইনি ব্যবস্থা নেবে।
সেই ভিডিওগুলোর সাহায্যে আমি একটা ডেমো বানালাম। তারপর শুরু করলাম দোরে দোরে ঘোরা–মানুষকে বোঝানো, পার্টি আর মিটিংয়ে হঠাৎ ঢুকে যাওয়া, এমনকি আশেপাশের ধনীদের অন্তহীন বিউটি পেজেন্টগুলোতেও হাজির হওয়া–সব জায়গায় শুধু আমার এই পাগলাটে স্বপ্নটা নিয়ে কথা বলতে।
আমি পেনসিলভানিয়া থেকে ভার্জিনিয়া পর্যন্ত গিয়েছি আমার স্বপ্ন বিক্রি করতে। অনেকে আমাকে সত্যিই পাগল শিল্পী ভেবেছিল–অবাস্তব উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ভরা। বহুবার এমন হয়েছে, আমি কারও বাড়ি বা অফিসে ভিডিও প্রেজেন্টেশন করছি আর তারা চুপিচুপি হাসছে। কেউ কেউ তো আমাকে ভিক্ষুক ভেবে পকেটমানি পর্যন্ত দিয়েছে, যেন আর ফিরে না আসি।
ঠিক তখনই আমার দেখা হলো পল তানিয়েডোর সঙ্গে–ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়ায় বসবাসকারী এক ফিলিপিনো ফটোগ্রাফি শিল্পী। তিনি আমার ১৬ মিমি ব্ল্যাক–অ্যান্ড–হোয়াইট ফুটেজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন। ভোরবেলার কফির আড্ডায় কথাগুলো হয়েছিল। তাঁকে টেনেছিল সেই সাদা–কালো দৃশ্যগুলো–অপূর্ব। সত্যিই, ১৬ মিমি ব্ল্যাক–অ্যান্ড–হোয়াইট ফিল্মস্টক ৭২২২–এর মতো কিছু নেই–এর দানা আর গভীরতা ভয়ানক শক্তিশালী।
পল আর আমি একই স্বপ্ন দেখতাম–ফিলিপাইনের চলচ্চিত্রে এমন কিছু সৃষ্টি করা, যা নান্দনিকতার স্তরে অবদান রাখবে, কিন্তু সেই পচা বাণিজ্যিকতা আর অর্থহীনতার জগতে নয়, যা তথাকথিত ফিলিপিনো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে গ্রাস করেছে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের দেশের নানা প্রশ্ন নিয়ে কথা বলতাম–শিল্প, রাজনীতি, অর্থনীতি, আমাদের সংগ্রাম। ভাবতাম, আমরা আমাদের সামান্য উপায়ে কী করতে পারি? ফিলিপিনো হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কী? আমরা আমেরিকায় আছি কেন? কেন কোটি কোটি ফিলিপিনো দেশ ছাড়তে চাইছে? কেন এখনো আশি শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে? আমাদের সংস্কৃতিতে এমন কী গভীর ত্রুটি আছে?
পল ডু–আর্ট থেকে রোলগুলো উদ্ধার করে আনে, আর আমরা ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মের শেষ দিকে আবার শ্যুটিং শুরু করি। ১৯৯৬ সালের শেষদিকে আমি যখন ফিলিপাইনে ফিরে আসি, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই ম্যানিলায় কিছু ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্য শ্যুট করব। প্রি–প্রোডাকশন শুরু হয়, এবং ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্যুটিং ফের শুরু হয়।
এটা ছিল এক দীর্ঘ, কষ্টসাধ্য লড়াই। আমরা শুধু তখনই কাজ করতাম, যখন কিছু অর্থ জোগাড় হতো। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে আবার কিছু দৃশ্য শ্যুট করি, তারপর আমাকে থামতে হয়। গল্পটার ধাঁধা যেন কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। আমি একটা সূতো খুঁজছিলাম যা দিয়ে ছবিটাকে সম্পূর্ণ করা যায়। কিন্তু ছবির ধরন এতটাই “জীবন্ত” হয়ে উঠেছিল যে তা ক্রমাগত বাড়তে থাকছিল–আমি বুঝতেই পারছিলাম না কোথায় থামব।
এদিকে অভিনেতারা বুড়িয়ে যাচ্ছিলেন, কেউ কেউ মারা যাচ্ছিলেন। একই টিম ধরে রাখা যাচ্ছিল না। টাকার অভাব তো ছিলই, কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল নান্দনিক অবস্থান ধরে রাখার সংকট। এত দীর্ঘ বিরতির মধ্যে গল্প, চরিত্র, এমনকি সাধারণ ধারাবাহিকতাও হারিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল সবসময়। আমি যেন এক বিশাল, অধরা ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম–যার কোনো শেষ নেই।
আমার স্বপ্নে, আমি যেন ডুবে যাচ্ছিলাম–অগাধ, অচিন সাদা–কালো এক সাগরে।
তারপর শুরু হলো নানা ব্যঙ্গ আর নিষ্ঠুর রসিকতা–লোকজন বলতে লাগল, Ebolusyon হলো সেই ল্যাভ ডিয়াজের ছবি যা কখনো সম্পূর্ণ হবে না, কেবল অসম্পূর্ণ ফুটেজ হিসেবেই দেখানো যাবে; সেই ছবি, যা সে তার কবর পর্যন্ত নিয়ে যাবে। কেউ কেউ বলত, আমি ছবিটার নাম Ebolusyon রেখেছি কারণ সেটাই আসলে তার প্রকৃতি–একটা চিরবিবর্তনশীল সত্তা, যা কখনো শেষ হয় না, এক মিথের মতো চলতেই থাকে। এমনও অনেকে ছিল যারা এই কথাগুলো আমার সামনেই বলেছে।
অনেক সময় আমি নিজেকে স্বপ্নে দেখতাম-Ebolusyon শ্যুট করছি, আবার, আবার। ছবিটা যেন এক বিশাল ক্রুশ হয়ে আমার কাঁধে চেপে বসেছিল।
২০০১ সালের মাঝামাঝি, যখন আমি Batang West Side এর পোস্ট–প্রোডাকশন করছিলাম, তখন Ebolusyon শেষ করা আমার একধরনের অবসেশন হয়ে উঠেছিল। আমি তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীদের নিয়ে একটা সাপোর্ট গ্রুপ গঠন করলাম–যেন আবার শ্যুটিং শুরু করে ছবিটা শেষ করা যায়। এটাকে আমি ওয়ার্কশপের মতো করে নিয়েছিলাম–খুবই অনানুষ্ঠানিক। তরুণদের কফির আড্ডায় একত্র করতাম, শিল্প ও চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করতাম, তারপর ধীরে ধীরে কথা আসত Ebolusyon এর দিকে–কীভাবে শেষ করা যায়। এই আলাপগুলো আমার জন্য ছিল একরকম মুক্তি, ধ্যানের মতো–হতাশা দূর করার একটা উপায়। শেষ পর্যন্ত, তারাই আমাকে সাহায্য করেছিল। অনেকে স্বেচ্ছায় প্রযোজনার কাজে যুক্ত হয়েছিল।
তারপর ২০০২ সালে Batang West Side নিউইয়র্কের Asian- American International Film Festival- G এ প্রদর্শিত হওয়ার পর আমি পলকে বললাম, “এবার সময় এসেছে ছবিটা শেষ করার।” আমি অবশেষে সেই “সূতো”টা খুঁজে পেয়েছিলাম–সেটা ছিল সোনা। সোনা, যা ফিলিপিনো সমাজ–সংস্কৃতির বহু অর্থের প্রতীক–লোভের,অন্ধতার, পরিত্রাণের, এমনকি আত্মার প্রতীক। আমি তখন এক চরিত্র সৃষ্টি করলাম, যে সোনা খুঁজে পাওয়ার নেশায় পাগল।
এই ভাবনাটা যেন এক অলৌকিক উদ্ভাসের মতো এল। আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্যুট করলাম। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে, শুটিংয়ের শেষ দিনে–উত্তর লুজনের বেনগুয়েত প্রদেশের ইতোগন গ্রামের মহিমান্বিত পাহাড়ে–বৃষ্টি নামল, এক অনিন্দ্য সুন্দর বৃষ্টি। সেই শেষ পর্যায়ের শ্যুটিং আমাদের সবার জন্য এক গভীর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল–সমষ্টিগত প্রচেষ্টা আর তরুণ শিল্পীদের অক্লান্ত উৎসাহে ছবিটা অবশেষে পূর্ণতার দিকে এগোতে লাগল।
পোস্ট–প্রোডাকশনের আসল কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু টরন্টো ফেস্টিভ্যালের এক সপ্তাহ আগে আমি আরও কিছু দৃশ্য যোগ করলাম। আমরা চাইলে আরও দুই দিন শ্যুট করতে পারতাম, কিন্তু সময়সীমা সামনে চলে আসায় থামতেই হলো। আমি ভাবছিলাম, ম্যানিলায় ফিরে গিয়ে আরও কিছু দৃশ্য শ্যুট করব–তাতেই ছবিটা সম্পূর্ণ হবে। (চলবে)