লবণে ক্ষতি, বনে লাভ!

কক্সবাজারে ৫ মাস পর বৃষ্টি

কক্সবাজার প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৬ এপ্রিল, ২০২১ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

৫ মাস পর বৃষ্টির দেখা পেল কক্সবাজারবাসী। চৈত্রের তপ্তরোধে মাঠঘাট যখন পুড়ছে, এমন সময়ে গত রোববার রাতে দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে স্বস্তি বয়ে এনেছে জনমনে। তবে এই কালবৈশাখী ঝড়ে মাঠ থেকে ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার লবণ। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিক্ষেতও।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে শুরু হওয়া মাঝারি বৃষ্টিপাত চলে টানা ২ ঘণ্টা পর্যন্ত। এসময়ে কক্সবাজারে ২৩ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ। কক্সবাজার আবহাওয়া বিভাগের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, টানা ৫ মাস পর রোববার রাতে কঙবাজারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টির ফলে সোমবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমেছে। পাশপাশি চৈত্রের তপ্তরোধে পোড়া প্রকৃতিতেও স্বস্তি এনেছে। তিনি জানান, এর আগে সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছিল গত বছরের ৪ নভেম্বর। ওইদিন মাত্র ১০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তবে রোববার রাতের বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ উপজেলার কয়েক হাজার একর লবণ মাঠের কয়েক কোটি টাকার লবণ ভেসে গেছে এবং ঝড়ো হাওয়ায় কৃষিক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে।
কঙবাজার বিসিক লবণ কেন্দ্রের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, কালবৈশাখীর কারণে দুয়েকদিনের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। একই তথ্য জানান কঙবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মকসুদ আহমেদ। তিনি বলেন, রোববার রাতের একপশলা বৃষ্টির পর সোমবার সকালে চাষিরা ফের লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছেন। চলতি মৌসুমে কঙবাজারের সাত উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৫৭ হাজার ২৭০ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। প্রায় ৫৫ হাজার চাষি লবণ চাষে জড়িত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কাশেম জানান, রোববার রাতের কালবৈশাখীর ঝড়ে মৌসুমি সবজি ও কৃষিক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা অতি সামান্য। এতে সবজির বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিমের মতে, এই বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি বনাঞ্চলে খরার শিকার বৃক্ষগুলো নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এর ফলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃক্ষগুলোতে নতুন পাতা গজাবে। সবুজ পাতায় প্রকৃতিতেও আসবে নতুন প্রাণ। এছাড়া কৃষিক্ষেতে ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ভূ-তত্ত্ববিদ. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকীর মতে, এই বৃষ্টিপাতের ফলে কঙবাজারের ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলের মজুদের উপর অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। শহরের একাংশে প্রতি বছর খরা মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলের সাথে জনস্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি ও ইউরেনিয়াম-থোরিয়ামের মত ক্ষতিকর তেজষ্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আর বৃষ্টিপাত হলে মজুদগুলো পুনরায় রিফিল হয়ে পানিতে ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা কমে আসে।
এদিকে রোববার রাতের ঝড়ে উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ২০ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পের শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এতে হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম দিনেই ৫৩ মামলা, জরিমানা সাড়ে ১৭ হাজার
পরবর্তী নিবন্ধআরও ভাতা পাবেন বিভিন্ন শ্রেণির বীর মুক্তিযোদ্ধারা