স্বাভাবিক সময়ে রমজান মাস এলেই একটু বাড়তি আয় থাকে সেলুন মালিক-কর্মচারীদের। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে সেলুন বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ হয়ে তারা দিশেহারা। গত বছরও রমজানের পুরো মাস সেলুন বন্ধ থাকায় এক প্রকার অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করতে হয়েছে তাদের। এবারও চট্টগ্রামের প্রায় ১০ হাজার সেলুন মালিক-কর্মচারী বিপাকে পড়েছেন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে নগরীতে সেলুন দোকানের কার্যক্রম কিছুটা সচল হলেও সংক্রমণের ভয়ে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ সেলুনবিমুখ হয়ে পড়েন। অনেকে বাসায় ব্যক্তিগতভাবে ক্ষৌরকর্ম সারছেন। এতে সেলুন মালিক-কর্মচারীদের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার ওপর চলতি লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সেলুন কর্মচারীরা। মহানগর সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে ১০ হাজারের অধিক সেলুন মালিক-কর্মচারী রয়েছে। নগরীর মোমিন রোডের সেলুন দোকানি মিন্টু পদ সুশীল বলেন, করোনা ভাইরাস আসার পর থেকে এমনিতেই সেলুনে গ্রাহক কমে গেছে। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে সেলুন ব্যবসায় দুর্দিন চলছে। গত বছর পুরো রমজানই সেলুন বন্ধ ছিল। এবার রমজানের শুরু থেকেই লকডাউনের কারণে সেলুনগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে সেলুন কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছে। অনেকে পরিবারের ভরণপোষন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। মিটুন দাশ লিটন নামের আরেকজন বলেন, ‘অনেকের ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। সেলুন বন্ধ থাকায় আয়ও একেবারে বন্ধ। মালিক, কর্মচারী সকলের আয় বন্ধ। রোজগার বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ সেলুন কর্মচারীর পরিবারে ঠিকমতো খাবারও জুটছে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার পথে।’
নগর সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিলন শীল দৈনিক আজাদীকে বলেন, লকডাউনের কারণে নগরসহ পুরো চট্টগ্রামের সেলুনগুলো বন্ধ। মালিক-কর্মচারী সবাই অসহায় হয়ে পড়েছে। নগরীতে সমিতির সাড়ে ৪ হাজার সদস্য রয়েছে। সেলুন মালিক ও কর্মচারী মিলে প্রায় ১০ হাজারের অধিক লোক চট্টগ্রাম শহরে সেলুনের কাজে নিয়োজিত। একই সাথে তাদের ১০ হাজার পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতি সেলুন মালিক কর্মচারীদের সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লকডাউনে বন্ধ রয়েছে সীতাকুণ্ডের অধিকাংশ দোকানপাট। দোকান বন্ধ থাকায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন সীতাকুণ্ডের ৫ শতাধিক সেলুন মালিক। তবে কিছু কিছু সেলুন মালিক জীবিকার তাগিদে খোলা রেখেছেন সেলুন। কিন্তু এসব দোকানেও মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। যখন হাতে অফুরন্ত কাজ ছিল তখন কেবল খেয়ে পড়ে থাকতেন সেলুনকর্মীরা। দোকান বন্ধ থাকায় এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছে তারা। বাড়বকুণ্ডের শুকলাল হাটের সেলুন মালিক বিকাশ দাস জানান, গত ছয়-সাত দিনেই অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। কোনো রকম খেয়ে, না খেয়ে আছি। সামনের দিনগুলাতে কী করব বুঝছি না।
সীতাকুণ্ড পৌরসদর সেলুন মালিক সমিতির সভাপতি দিলিপ দাশ বলেন, করোনা আতংকে মানুষ সেলুনে আসছে না। সীতাকুণ্ড পৌর এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক সেলুন মালিক-কর্মচারী বেকার সময় পার করছেন। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।