সবাই জানে, মানছে না কেউ

স্বাস্থ্যবিধি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় দফায় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে প্রতিদিনই রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অযথাই ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষকে সামলাতে হচ্ছে তাদের। নগরীর রাস্তাঘাটের মোড়ে মোড়ে-কাঁচা বাজারে-দোকানে কিংবা অলি-গলিতে অযথাই ঘোরাঘুরি এবং আড্ডায় দেখা যাচ্ছে অকারণে বের হওয়া তরুণ-যুবকদের।
এ অবস্থায় জনগণ নিজে থেকে সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে; আর সেটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কর্মকর্তারা। প্রতিদিনই অযথা ঘোরাঘুরি-মাস্ক না পরায় অনেককে জরিমানা করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা যাদেরকেই মাস্ক ছাড়া রাস্তায় পাচ্ছি কিংবা অযথা ঘর থেকে বের হয়ে মোড়ে মোড়ে আড্ডা দিচ্ছেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, ‘ভুলে মাস্ক ফেলে এসেছি-ভুল হয়েছে, ঘরে ভালো লাগছে না তাই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয়েছি।’ যাদেরকেই রাস্তায়-বাজারে কিংবা মোড়ে মোড়ে পাচ্ছি-সবাই বলছেন, ‘ভুল হয়ে গেছে’। সবাই জানে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে-মাস্ক পরতে হবে-ঘরে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। কিন্তু কেউ মানছে না।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আজাদীকে বলেন, ‘সবাই জানেন মাস্ক পরতে হবে, কিন্তু অনেকেই তা মানতে চান না। মাস্ক না পরেই বের হয়ে যান। অথচ দেখেন মাস্ক ৮০ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। টিকার চেয়েও অনেক বেশি সুরক্ষা দেয়। কেউ যদি টিকাও দেন তবুও তাকে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখন সাউথ আফ্রিকার যে ভ্যারিয়েন্ট (ধরণ) এসেছে সেটা তরুণদের বেশি আক্রান্ত করছে। এই সিটির সবাই শিক্ষিক, সচেতন মানুষ; এখন ঘরে ঘরে গিয়ে কিন্তু মাস্ক পরার জন্য সচেতন করার সুযোগ নেই। পারিবারিকভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন অযথা ঘর থেকে বের না হন। যারাই প্রয়োজনে বের হবেন অবশ্যই যেন মাস্ক পরেন এই আহ্বান জানাই। এটা কার্যকর করা না হলে যতই লকডাউন দিক কিন্তু কিছু হবে না।’ তিনি বলেন, আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ মাঠে রয়েছেন মানুষকে সচেতন করা জন্য। এই বিষয়ে মানুষকে অবশ্যই অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বেশকিছু নির্দেশনার পর এক সপ্তাহের লকডাউনের পর আবারো এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। কঠোর লকডাউন তো দূরের কথা কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধিরই তোয়াক্কা করছে না বলে জানান লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কর্মকর্তারা। এমন মানুষকে রুখতে নগরজুড়ে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন জেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। প্রতিদিন পুরো নগরী জুড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হান মেহেবুব, মো. আতিকুর রহমান, নাজমা বিনতে আমিন, মামনুন আহমেদ অনিক, আশরাফুল হাসান, মিজানুর রহমান, মো. আলী হাসান, মো. জিল্লুর রহমান, মো. উমর ফারুক, প্লাবন কুমার বিশ্বাস, নূরজাহান আক্তার সাথী মাঠে রয়েছেন সাধারণ মানুষজনকে সচেতন করতে।
এদিকে পুলিশ বলছে, লোকজন যতটা না কাজের জন্য বাইরে বেরোয় তার চেয়ে অনেক বেশি বের হয় অযথাই। তারা এমন কাজের অযুহাত দেখান যে, সেটি দুদিন পরে করলেও চলতো। আবার বাইরে বের হওয়ার জন্য ন্যূনতম কোনো প্রটেকশন রাখেন না অনেকে। এই লোকগুলোকে আমরা প্রত্যাশা করি না। এ ধরণের অপ্রত্যাশিত লোকজনকে সামলাতে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট আজ হিমশিম খাচ্ছেন।
দিনদিন ক্রমশ বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। মৃত্যুর সংখ্যাও থেমে নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭জনের। একইসময়ে করোনাভাইরাস রোগী আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ২৫২জন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সামনে মহাদুর্যোগ হতে পারে আশঙ্কা করে রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবাইকে একটা কথা মানতে হবে যে, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন মানে আপনি আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দিচ্ছেন। সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করছেন। মনে রাখবেন মাত্র গুটিকয়েক মানুষের উদাসীনতার জন্য আজ করোনা আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে। এই বিপদ থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এর জন্য বর্তমানে প্রথম শর্ত হলো- ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধলকডাউনে সেলুন ব্যবসায় ধস
পরবর্তী নিবন্ধইলিয়াস আলীকে নিয়ে বক্তব্য ‘বিকৃতির’ অভিযোগ মির্জা আব্বাসের