রোধ করতে হবে প্রযুক্তির অপব্যবহার কাজে লাগাতে হবে ইতিবাচক দিক

| শনিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশেও কম নয়। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক কাজ সহজেই করা যায়। প্রযুক্তির অনেক ইতিবাচক দিক আছে, যেগুলো সত্যিই গুরুত্ববহ। বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমকে (কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার, বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও অ্যাপস ইত্যাদি) দ্রুত যোগাযোগের অন্যতম বাহন হিসেবে গণ্য করছেন। এ জন্যই ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির প্রতি মানুষের এত মনোযোগ বা আকর্ষণ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কিশোর, তরুণ ও যুবসমাজের বড় একটি অংশ আশঙ্কাজনকভাবে জড়িয়ে পড়ছে নানা সাইবার ক্রাইমে। সাইবার ক্রাইম থেকে পরবর্তী সময়ে ঘটছে বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অপরাধ বিশ্নেষকদের মতে, ‘দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয় পেটের দায়ে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা সঙ্গদোষ, লোভ ও অভিভাবকের সঠিক পরিচর্যার অভাবে এবং উচ্চবিত্তের সন্তানরা সার্বিক পরিচর্যা ও যথাযথ নজরদারির অভাব এবং আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়। সন্ত্রাসী গডফাদাররা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে কিশোরদের দ্বারাই মূলত বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা এদের নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের গ্রেপ্তার করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু-একদল ধরা পড়লেও অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সামাজিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে শিশু-কিশোররা সন্ত্রাসী গডফাদারদের স্বার্থের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া সমাজ পরিচালনা শক্তির অসহযোগিতা, উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা, দারিদ্র্যের বিস্তার, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও হতাশা প্রভৃতি শিশু-কিশোরদের অপরাধের পথে ঠেলে দিচ্ছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে আজকাল ঘটছে নানা অঘটন। সংসার ভাঙন, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পড়ালেখায় অমনোযোগিতা, অসহিষ্ণুতাসহ অনেক অশুভ কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা সকল প্রকার সহিংসতার অন্যতম কারণ। সর্বত্র এখন চলছে সহিংসতা, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক ডিজিটাল দুর্নীতিই মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে। আর সমাজে এ ধারার অপ্রতিরোধ্য উত্থানের ফলে-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রে সর্বত্র বাজছে পতনের সুর। যা প্রকারান্তরে সহিংসতা, ভঙ্গুর পরিবারে রূপ নিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে শিথিল হচ্ছে সামাজিক বন্ধন। প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার আগে মানুষ গুজব ছড়ালেও তা শুধু একটি এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকত; কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে এখন তা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী, যার মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়, জাতির স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলোতে দেশব্যাপী জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এছাড়া ফেসবুক, ইউটিউব, ইমু, টিকটক, বিভিন্ন গেমসসহ জনপ্রিয় অ্যাপসগুলোতে আসক্তির কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়া এবং বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক মানসিক ও মেধা বিকাশে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ভুল কাজে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাওয়ার ফলে নাগরিকদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সামাজিক সমপ্রীতি। অথচ প্রযুক্তির জনপ্রিয় সৃষ্টিগুলোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশ ও জাতির প্রভূত উন্নতি ঘটবে। কাজেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সুনাগরিকের পরিচয় দিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, প্রযুক্তি ভালো কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ ও দেশের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের ভাবনায় থাকতে হবে যে প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহার মানব জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির যাবতীয় ইতিবাচক দিক যেমন আমাদের ব্যবহার করতে হবে, তেমনি নেতিবাচক দিককে পরিহার করতে হবে। বাংলাদেশে প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার পর থেকে এর নানামুখী ব্যবহারে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণজনক হলেও অপব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা প্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার। এর কারণে নানা অপপ্রচারসহ অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সমাজে, যা এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশ ও জাতির জন্য। ফলে কঠোর হাতে দমন করতে হবে প্রযুক্তির অপব্যবহার। প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে দেশ ও জাতি-সেটাই প্রত্যাশা আমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে