রোগী-ডাক্তার উভয়ের জন্যই আশীর্বাদ

এন্টিজেন টেস্টের ফল ২৫-৩০ মিনিটে ।। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও চালুর পরামর্শ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১ মে, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

প্রসব বেদনা দেখা দিলে একজন প্রসূতিকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। তৎক্ষণাৎ ওই প্রসূতিকে ডেলিভারি কক্ষে নিয়ে যাওয়াটা জরুরি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ওই রোগী করোনা আক্রান্ত কী না, তা জানা প্রয়োজন। আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করাতে গেলে ২৪ ঘণ্টার আগে রিপোর্ট পাওয়ারও সুযোগ নেই। এমন জরুরি মুহূর্তে জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে- নিশ্চিত না হয়ে ডেলিভারি অপারেশন করার পর অনেক চিকিৎসক-নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ, প্রসূতির করোনা আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারলে চিকিৎসক-নার্সরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েই অপারেশন কক্ষে যেতেন।
প্রসূতি নারী ছাড়াও হৃদরোগী, ডায়ালাইসিসের রোগীসহ অন্যান্য রোগীদের ক্ষেত্রেও যেন একই চিত্র। করোনা আক্রান্ত কী না, তা নিশ্চিতে বিলম্বের কারণে চিকিৎসা পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রোগীদের। করোনা ইউনিটে ইয়েলো ও রেড নামে দুটি জোন করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। শুরুর দিকে করোনার উপসর্গ থাকা রোগীকে প্রথমে ইয়েলো জোনে ভর্তি দেয়া হতো। সেখানে রেখে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হতো। রিপোর্ট পেতে অন্তত ৩/৪ দিন সময় লাগতো। কোনো কোনো সময় এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগেছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর করোনা পজিটিভ পাওয়া গেলে ওই রোগীকে স্থানান্তর করা হতো রেড জোনে। আর নেগেটিভ পাওয়া রোগীদের ভর্তি দেয়া হতো সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে। নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট পাওয়ার সময়টুকুতে (৩/৪ দিন) যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাননি অনেক রোগী। নিশ্চিত হতে না পারায় বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে চিকিৎসকদেরও। তবে এখন এ পরিস্থিতি নেই। অনেকটা আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বলা যায়। আর এ পরিবর্তন এসেছে এন্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমেই। খুব কম সময়ের (২৫-৩০ মিনিটের) মধ্যেই ফল পাওয়ায় রোগী-চিকিৎসক উভয়ের জন্যই যেন আর্শিবাদ হয়ে এসেছে এই এন্টিজেন টেস্ট।
এন্টিজেন টেস্টের সুফল পাওয়ার কথা বলতে গিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, এন্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। যা জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ধরণের ভূমিকা রাখছে। যাদের বেশি মাত্রায় করোনার উপসর্গ বিদ্যমান, বিশেষ করে তাদের এই এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। যেহেতু দ্রুত সময়ে ফল পাওয়া যাচ্ছে, পজিটিভ পাওয়া গেলে ওই রোগীকে কোভিড রেড জোনে ভর্তি দেয়া হচ্ছে। আর নেগেটিভ পাওয়া রোগীকে হাসপাতালের
আন্তঃবিভাগে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়া হচ্ছে। ফলে জটিল কোনো রোগীকে চিকিৎসার জন্য আর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। মোটকথা- রোগীদের পাশাপাশি আমরাও কিন্তু এন্টিজেন টেস্টের সুফল পাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, আরটিপিসিআর ল্যাব সুবিধা না থাকা দশটি জেলায় প্রাথমিকভাবে করোনার এন্টিজেন টেস্ট চালু করে সরকার। যদিও পর্যায়ক্রমে সব জেলায় এ টেস্ট সুবিধা চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। এর আওতায় চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে প্রথম এ টেস্ট চালু হয়। তবে পরবর্তীতে চমেক হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালেও চালু হয়েছে এন্টিজেন টেস্ট। নগরে স্থাপন করা ব্র্যাকের দুটি বুথেও সমপ্রতি এই এন্টিজেন টেস্ট চালু হয়েছে।
এন্টিজেন টেস্টে প্রথম দফায় ১ হাজার কিট পেলেও পরবর্তীতে ২ হাজারসহ মোট ৩ হাজার কিট পায় বিআইটিআইডি ল্যাব। উপসর্গ থাকা সন্দেহজনক রোগীদের মধ্য থেকে কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এন্টিজেন টেস্ট করা হয় জানিয়ে বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, উপসর্গ দেখা দেওয়ার চার দিনের মধ্যে এন্টিজেন টেস্ট করাতে পারলে অনেকটা ত্রুটিমুক্ত ফল পাওয়া যায়। কিন্তু চার দিনের বেশি হয়ে গেলে নির্ভুল ফল পাওয়া নিয়ে সংশয় থাকে। তিনি জানান, এন্টিজেন টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট আসলে ওই রোগী নিশ্চিত করোনা আক্রান্ত হিসেবে ধরে নেয়া হয়। তবে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও এন্টিজেন টেস্টের ফল নেগেটিভ আসলে সেক্ষেত্রে ওই রোগীর নমুনা পুনরায় আরটিপিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এন্টিজেন টেস্টে এখনো পর্যাপ্ত সংখ্যায় কিট রয়েছে বলে জানান ডা. শাকিল আহমেদ। ভালো সুফল পাওয়ার কথা জানিয়ে ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই এন্টিজেন টেস্টের অনুমতি দেয়া উচিত। কারণ, এর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বেশি টেস্ট করা যাবে। আর যত বেশি টেস্ট করা যাবে, তত বেশি রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই টেস্ট চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।
এন্টিজেন টেস্টে সাড়ে ৭ হাজার কিট পাওয়ার তথ্য জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, সবাইকে এন্টিজেন টেস্ট করাচ্ছি না। উপসর্গ থাকাদের মাঝে বিশেষ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই এন্টিজেন টেস্ট করা হয়। হাসপাতালে দৈনিক ৫০টির মতো এন্টিজেন টেস্ট হয় বলে জানান তিনি।
৬ হাজার কিট পাওয়ার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, আমরা বেছে বেছে এন্টিজেন টেস্ট করছি। অল্প সময়ে রেজাল্ট পাওয়া যায় বিধায় এই টেস্টে বড় ধরণের সুফল মিলছে বলে জানান ডা. আব্দুর রব মাসুম।
এদিকে, ব্র্যাকের স্থাপন করা জামালখান প্রেসক্লাব বুথ ও বিবিরহাট বুথে স্বল্প পরিসরে এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচি চট্টগ্রামের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার হানিফ উদ্দিন। আগামী সপ্তাহে আরো দুটি বুথে এই টেস্ট চালু করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে উপসর্গ থাকা ও সন্দেহজনক রোগীদের মাঝে কিছু বিষয় বিবেচনায় বেছে বেছে এই এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানান ব্র্যাকের এই কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনায় সংকটে শ্রমিক
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত ১৮০ মৃত্যু ৪