রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আসুক

| শনিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

সাধারণ মানুষের অত্যন্ত আগ্রহের জায়গা রেল। রেলের আরামদায়ক, স্বস্তিকর ও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ভ্রমণের প্রতি মানুষের ঝোঁক, তা অনেকটা চিরন্তন হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি যখন শুরু হয়, তখন থেকে এ এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। কখন শেষ হবে এই প্রকল্প- তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই।
কিন্তু প্রকল্পটির শম্বুক গতি সবাইকে হতাশ করে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘রেলের কাজে ধীরগতি/ ১শ’ কিলোমিটারে বসেছে মাত্র ১৬ কি.মি’ শীর্ষক একটি সংবাদ। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজের গতি আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না। প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে একেবারে ধীরগতিতে। সে কারণে টার্গেট টাইম চলতি বছরের জুনে তো নয়ই, ডিসেম্বরেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বলতে গেলে অনেকটা রেলের মতোই ধীরগতিতে চলছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজের গতি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি গ্রহণের সময় ২০১৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ২০১৭ সালে। তখন প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল চলতি বছরের (২০২২ সালের) জুন পর্যন্ত।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। তবে কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আজাদীকে জানান, গত জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ অগ্রগতি মাত্র ৬৬ শতাংশ। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের জুনে চালু হতে পারে নতুন এই রেলপথ। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সহ রেলের কর্মকর্তারা আগামী ডিসেম্বরে রেলপথটি চালুর কথা বারবার বলে আসছেন। বর্তমান সময়ের কাজের অগ্রগতি দেখে সেই আশা করা যাচ্ছে না।
রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। কেবল সড়কের উপর নির্ভর করে একটি দেশের পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয়। এরই অংশ হিসেবে রেলওয়ের উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে রেলের উন্নয়ন হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকবল সংকট থাকার পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করা হচ্ছে। রেল ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে সম্পূর্ণ আধুনিক করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। আমরা রেলকে একটি নিয়মতান্ত্রিক অবস্থায় আনতে এবং যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে রেলের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে, এ কথা বলতেই হয়। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে।
জানা গেছে, রেলওয়ের উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। চলমান এ মহাপরিকল্পনার আওতায় ৬টি ধাপে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) সংশোধিত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার, মোংলা বন্দর, টুঙ্গীপাড়া, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনে প্রকল্পগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। আমরা চাই সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আসুক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপঙ্কজকুমার মল্লিক : বাংলা সংগীত ভুবনে এক অজেয় শিল্পী