রেবতী মোহন বর্মণ (১৯০৫–১৯৫২) বিংশ শতাব্দীর একজন সাম্যবাদী ধারার লেখক ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বিপ্লবী। রেবতী বর্মণ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার শিমূলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার পগোজ স্কুল এবং কুমিল্লার গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কিশোরগঞ্জের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে এমএ পাস করেন। তার আগে বিএ পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য পেয়েছিলেন জগত্তারিণী পদক এবং পদক বিক্রির অর্থ দিয়ে সহপাঠীদের নিয়ে প্রকাশ করেছিলেন কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘বেণু’। আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন ও ব্রিটিশ শাসকদরদী পরিবারের সন্তান হলেও রেবতী বর্মন সাম্যবাদী ও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রাবস্থায়। ১৯৩০–৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বিনা বিচারে তিনি কারাযাপন করেন। দেউলী জেলে বন্দী থাকাকালীন সময় তার শরীরে কুষ্ঠরোগের জীবাণু ঢুকিয়ে দেয়া হয়। জেলে থাকাকালীন সময়ে তিনি সমাজ বিবর্তণমূলক অসংখ্য গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি রচনা করেন যা পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বেলঘরিয়ায় থাকাকালীন শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মাথার ওপর পুলিশের হুলিয়া নিয়ে তিনি বাংলাদেশের ভৈরব উপজেলায় চলে আসেন। দেশভাগের পরে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তাকে বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে আগরতলা চলে যেতে হয়। সাম্যবাদী ভাবধারার লেখক হিসেবে তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে: সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি (১৯৩৮), মার্কস প্রবেশিকা (১৯৩৮), কৃষক ও জমিদার (১৯৩৮), সাম্রাজ্যবাদের সংকট (১৯৩৮), হেগেল ও মার্কস (১৯৩৮), ক্যাপিটাল ( মার্কসের ক্যাপিটালের বাংলায় লেখা সংক্ষিপ্তসার–১৯৩৮), লেনিন ও বলশেভিক পার্টি (১৯৩৯), সমাজের বিকাশ (১৯৩৯), সোভিয়েট ইউনিয়ন (১৯৪৪), শান্তিকামী সোভিয়েট (১৯৪৫), অর্থনীতির গোড়ার কথা (১৯৪৫), পরিবার–ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি (অনুবাদ), সমাজতন্ত্রবাদ–বৈজ্ঞানিক ও কাল্পনিক (অনুবাদ), সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ (১৯৫২)। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।