বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যকার একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনটা দেখে কেউই হয়তো বিশ্বাস করেনি এই টেস্টে জিতবে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম দিনের পর থেকে রং বদলাতে থাকা হারারে টেস্টেই বাংলাদেশ তুলে নিল টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচাইতে বড় জয়টি। প্রথম ইনিংসে মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং, বল হাতে সাকিব-মিরাজের ঘুর্নি জাদু আর দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান-শান্তর সেঞ্চুরি আর বল হাতে মিরাজ-তাসকিনের আগুন ঝরানো সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়েকে ২২০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে দলের সামপ্রতিক ব্যর্থতার মিছিলে খানিকটা স্বস্তি হয়ে এলো এই জয়। এবছর পাঁচ টেস্ট খেলে প্রথম জয় পেল টাইগাররা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি। আগের বড় জয়টিও ছিল জিম্বাবুয়েতে। সে ম্যাচটি জিতেছিল টাইগাররা ১৪৩ রানে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছয় জয়ই এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
জিম্বাবুয়ের উইকেটে পেসাররা সুবিধা পেলেও একজন মেহেদী হাসান মিরাজ ধসিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়েছেন এই স্পিনার। মূলত তারই কাছে হেরেছে জিম্বাবুয়ে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন পেসার তাসকিন। সব মিলিয়ে দারুন এক জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ে সফর শুরু করল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানের লিড, দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৮৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা। সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের সামনে টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ৪৭৭ রানের। চার সেশনে সে রান তুলতে হতো জিম্বাবুয়েকে ইতিহাস গড়তে হলে। সে ইতিহাস আর গড়া হয়নি তাদের। শেষ পর্যন্ত স্বাগতিকরা থেমেছে ২৫৬ রানে।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আগের দিন তিন উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশের বোলাররা। বিশেষ করে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরের বিদায়ের পর অনেকটাই ব্যকফুটে চলে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। টেইলরের পর গতকাল শেষ দিনে বড় ভরসা হয়ে ছিলেন টিরিপানো। কিন্তু তিনি ৫২ রান করে ফিরলে শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের সম্ভাবনা। শেষ মুজারাবানি ৩০ রান করে বাংলাদেশের জয়টাকে খানিকটা বিলম্ব করেছে মাত্র। তবে বাধা হতে পারেনি। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৬ রানে অল আউট হয়। ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বোলাররাও দারুণ বোলিং করেছেন ম্যাচে। আর তাতেই এলো সহজ জয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্পিনেই কাবু জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিকদের ২০ উইকেটের ১৪টি নিয়েছেন স্পিনাররা। যেখানে মিরাজ দুই ইনিংসে ৯টি, সাকিব দুই ইনিংসে নিয়েছেন ৫টি। পেসারদের মধ্যে তাসকিন দুই ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন প্রথম ইনিংসে দেড়শ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ। দিনের শুরুতে তিনি মাঠে নামেন সতীর্থদের ‘গার্ড অব অনার’ পেয়ে। কারণ এই টেস্ট ম্যাচটি ছিল তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। ম্যাচের শেষ দিনের খেলা শুরুর আগেই মাহমুদউল্লাহ নিশ্চিত করে দিয়েছেন তিনি আর টেস্ট ক্রিকেট খেলবেন না। নিজের পারফরম্যান্স আর দলের জয় মিলিয়ে শেষটা স্মরণীয়ই হয়ে রইল বাংলাদেশের এই অল রাউন্ডারের।