রিসোর্টে নারীসহ আটকা মামুনুলকে ছিনিয়ে নিল অনুসারীরা

হেফাজতের ভাঙচুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ ।। রাঙ্গুনিয়ায় সংঘর্ষ, ৩ যুবলীগ নেতা আহত

| রবিবার , ৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এক রিসোর্টের রুমে নারীসহ আটকের পর হামলা চালিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তার অনুসারীরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
অন্যদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ৮টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে, গাড়ি ভাঙচুর করে সড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছিনিয়ে নেওয়ার আগে রিসোর্টের ভেতরে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এ ব্যাপারে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে হেফাজতে নেতা মামুনুল হককে তাদের (পুলিশের) কাছে নিয়ে নেয় হেফাজতের লোকজন। ওই নারী মামুনুল হকের স্ত্রী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজন জানিয়েছেন তারা স্বামী-স্ত্রী। এ বিষয়ে অতিরিক্তি ডিআইজি জেহাদুল কবীর বলেন, মামুনুল হক ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে গেছেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করিনি।
হেফাজতের লোকজন মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্তি ডিআইজি বলেন, তার লোকজন এসেছিল। তাদের সঙ্গে তিনি চলে গেছেন। ওই নারী হেফাজত নেতার স্ত্রী কিনা এই প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে উনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী।
অবরোধ প্রসঙ্গে তিনি জানান, মামুনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়ে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় তার সমর্থকরা অবরোধ করেছিল। পরে বুঝতে পেরে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে চলে গেছে হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও জেলার আমির আব্দুল আউয়ালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার খাদেম আনোয়ার চৌধুরী ফোন রিসিভ করে জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হককে রাত পৌনে ৮টার দিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি তার স্ত্রীসহ ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন। গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টের এক রুমে এক নারীসহ বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ঘেরাও করে স্থানীয়রা। রয়্যাল রিসোর্টের ব্যবস্থাপক লাল মিয়া জানান, দুপুরের দিকে মামুনুল হক তাদের রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে উঠেন। এরপর সেখানে অনেক লোকজন জড়ো হয়। ঘটনাস্থলে ইউএনও, পুলিশসহ অনেকে এসেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মামুনুল হক রিসোর্টের ওই রুমেই আটকা ছিলেন। এ খবর পেয়ে হেফাজতে ইসলামের লোকজনও লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে ভিড় জমায়। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং সেখানে ভাঙচুরও করেছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

আজাদীর রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের সমর্থনে গতকাল শনিবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। হেফাজতের কতিপয় লোকজনসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই মিছিল বের করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। মিছিলটি কোদালার বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করার এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ যুবলীগ নেতা গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন- কোদালা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদার আজম লিটন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ। এরমধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মুহিবুল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকী দুজন রাঙ্গুনিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হেফাজত নেতা মামুনুল হকের পক্ষে নানা স্লোগান দিয়ে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলে স্বল্প সংখ্যক মাদরাসা শিক্ষার্থী থাকলেও অধিকাংশ মানুষ ছিল সাধারণ পোশাকে। এসময় তাদের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। তারা মিছিলটি রাত পৌনে ৯টার দিকে কোদালা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড থেকে শুরু করে পূর্ব কোদালা ৬ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত আসে। পরে ৫নং ওয়ার্ড দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের সামনে এলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে মিছিলটি হেফাজতের ছিল কিনা জানতে চাইলে হেফাজত ইসলামী নেতা নুরুল আজিম জানান, কোদালায় আমাদের এই ধরনের পূর্ব নির্ধারিত কোন প্রোগ্রাম ছিল না। মাদরাসাও বন্ধ। তবে কারা এই মিছিল করেছে তা আমাদের জানা নেই।
কোদালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলম জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে কোদালায় বিএনপি নেতারা মিছিল বের করে। মিছিল থেকে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের তিনজনকে গুরুতর আহত করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এদিকে আহত যুবলীগ নেতা আবদুল জব্বার আজাদীকে জানান, বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই মিছিল বের করেছে। তখন রিঙা নিয়ে আমরা বাড়ি যাচ্ছিলাম। এসময় তারা অতর্কিত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র হাতে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমি সারা শরীর ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। দিলদার ও মুহিবুল্লাহও গুরুতর আহত হয়। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুব মিল্কী আজাদীকে জানান, কোদালায় সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাসানচর পরিদর্শন করলেন বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা
পরবর্তী নিবন্ধনৈরাজ্য ও অপচেষ্টার অপরাধে অপরাধী বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী