রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর করা ছাত্রদের কাজ না : প্রধানমন্ত্রী

আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান সংক্রমণ বাড়লে আবার স্কুল বন্ধ

| বৃহস্পতিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

সড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যারা গাড়ি ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগ করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশপাশি আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে লেখাপড়ায় মন দিতে বলেছেন। এদিকে আবারও যে মহামারীর নতুন ঢেউ আসতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়ে গেলে স্কুলও ফের বন্ধ করে দিতে হবে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, একটা গাড়িতে এক্সিডেন্ট হয়ে একটা মানুষ মারা গেল বলে আরো ১৫টা গাড়ি ভাঙা এবং সেখানে আগুন দেওয়া… এবং সেই ভাঙার ফলে এবং আগুন দেওয়ার ফলে গাড়িতে যাত্রী, ড্রাইভার, তারা যারা আহত হয় অথবা নিহত হয় সেই দায়িত্বটা কারা নেবে? শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙাচোরা- এটা ছাত্রদের কাজ না। এটা কেউ করবেন না দয়া করে। যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান। লেখাপড়া করেন। আন্দোলনের নামে যারা নাশকতায় জড়াচ্ছে, তাদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাড়ি ভাঙচুর, আগুন দেওয়া যারা করবে, তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে, তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে। আর ওই যে গাড়িতে আগুন দেবে, সেই গাড়িতে যদি কেউ মারা যায় বা কেউ আগুনে পোড়ে, তাহলে তার জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
সরকার বাসের ভাড়া বাড়ানোর পর থেকে শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। এর মধ্যে ২৪ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজ শিক্ষার্থী নাঈম হাসান এবং ২৯ নভেম্বর রামপুরায় বাসচাপায় একারামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়লের শিক্ষার্থী মাঈনউদ্দিনের মৃত্যু হলে আন্দোলন আরও জোর পায়। মাঈনউদ্দিনের মৃত্যুর পর ওই সড়কে বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা, ভাঙচুর করা হয় আরও কয়েকটি যানবাহন।
সড়ক দুর্ঘটনার পর মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে লাঠিসোঁটা হাতে কিছু মানুষের গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়া কতোটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই যে আগুন দেওয়া শুরু হল, ওই গাড়িতে কি যাত্রী নাই? শিশু নাই? ওখানে কি ছাত্র-ছাত্রী নাই? ওই আগুনে যারা পুড়বে, আহত হবে বা মারাও যেতে পারে, তার দায়িত্বটা কে নেবে? খুব স্বাভাবিকভাবে যারা গাড়ি ভাঙচুর করছে তাদের উপর বর্তায়। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে সেই ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। হতাহতের দায়ও ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগকারীদের নিতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যদি আহত হয়, বা নিহত হয়, সেটার দায়িত্ব যারা ভাঙচুর করছে, তাদের। সে কারণে আমি বলব, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।
সড়কে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি চাপায় প্রাণহানির ঘটনায় কারা দায়ী তা খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, তখন ময়লার গাড়ি নিয়ে যে যাচ্ছিল, সেই গাড়ির সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে যাবে কেন? সেটাও তো দেখতে হবে, সেটাও বিবেচনা করতে হবে। আর গাড়ি যে চালাচ্ছিল, তার এই গাড়ি চালাবার মত দক্ষতা আছে কি না সেটাও বিবেচনা করতে হবে। উভয় দিকেই দায়িত্বশীলতা কার কতটুকু আছে সেটা আমাদের দেখতে হবে।
তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে চলার সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাফিক রুলস মেনে চলতে হবে। রাস্তার যে কোনো জায়গা থেকে, যেখান থেকে সেখান থেকে রাস্তা পার হতে গেলে অ্যাঙিডেন্ট হবেই। একটা চলমান গাড়ি চট করে ব্রেক করতে পারে না। সেটার ব্রেকটা কষতে সময় লাগে। প্রত্যেকটা রাস্তায় পারাপার করার জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। সেইখান থেকেই রাস্তা পার হওয়া সমীচীন। হঠাৎ করে দৌড় দেবে আর অ্যাঙিডেন্ট হবে, আর অ্যাঙিডেন্ট হলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া, গাড়ি পোড়ানো- এটা কি ধরনের কথা?
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম, জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত
পরবর্তী নিবন্ধগরু বিমানের কাছে গেল কীভাবে, তদন্তে কমিটি