শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ (৮০) কে রাষ্ট্রীয় মার্যাদায় সৎকার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় রাউজানের গহিরাস্থ কুন্ডেশ্বরীর নিজ বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য এক নজিরের মাধ্যমে মানবতাবাদী মানুষ লায়ন পি আর সিনহাকে শেষ বিদায় জানানো হয়।
লায়ন পি আর সিনহার মরদেহ সৎকারে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার সকালে তার দেহ গোসল করিয়ে শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এই সময় রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগের উপস্থিতিতে থানা পুলিশের একটি দল বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানান।
পরে লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতেয়ার দৈনিক আজাদীকে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মানবতাবাদী মানুষ লায়ন পিআর সিনহার মরদেহ সৎকারের পুরো কাজটিই গাউসিয়া কমিটি সম্পন্ন করেছে। গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবকেরা মৃতদেহ গোসল করানোর পর ধর্মীয় আচারের জন্য পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রদান করে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি শেষে মরদেহ খাটিয়ায় তুলে গাউসিয়া কমিটির সদস্যরাই বাড়ির পূর্ব পাশের চিতায় নিয়ে যান। সেখানে পরিবারের সদস্যরা অন্যান্য আয়োজন সম্পন্ন করে। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মোসাহেব উদ্দিন বখতেয়ার ও জেলা নেতা আহসান হাবিব চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল লায়ন পি আর সিনহার মরদেহ বহন থেকে সৎকার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন। এই সময় গাউসিয়া কমিটির সদস্য সাইফুল করিম বাপ্পা, মোহাম্মদ আফজাল, মোহাম্মদ রাসেল, মোহাম্মদ সজিব, মোহাম্মদ তাহের প্রমুখ অংশ নেন।
উল্লেখ্য যে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ মারা যান। তিনি আগে কিডনি, হার্টের রোগে আক্রান্ত ছিলেন। পরে তার শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকালে রাউজানের গহিরার কুন্ডেশ্বরীর নিজ বাড়ির মন্দিরের সামনে গুলি করে তার পিতা দানবীর অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করেছিল ঘাতকরা।