কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা ও সংলাপের ‘বাস্তবসম্মত পয়েন্ট বাদ পড়ার কারণে’ জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোট দেয়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা এবং যুদ্ধ বন্ধ করে অবিলম্বে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বানে বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদে ১৪১ ভোটে ওই প্রস্তাব পাস হয়।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের এক বছর পূর্তির আগের দিনে পরিষদের বিশেষ জরুরি অধিবেশনে ওই প্রস্তাব পাস হয়। এর তিন দিন পর গতকাল নিজেদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা করল বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেন, ইউক্রেনে সমন্বিত, ন্যায়নিষ্ঠ ও টেকসই শান্তি প্রত্যাশায় যে কোনো অর্থবহ ও টেকসই সমাধানের জন্য সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে নিবিড় কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা ও সংলাপ আবশ্যক বলে মনে করে বাংলাদেশ। আমাদের মতে, প্রস্তাবটিতে এই গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবসম্মত পয়েন্টটি বাদ পড়েছে। সে কারণে আমরা ভোটদান থেকে বিরত থেকেছি।
সেদিন বাংলাদেশসহ ৩২ দেশ ওই প্রস্তাবের ওপর ভোট দানে বিরত থাকে। প্রস্তাবের বিপক্ষে রাশিয়াসহ সাতটি দেশ ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত থাকায় পরদিন বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায় ঢাকায় রুশ দূতাবাস।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক মেরুকরণের মধ্যে এই সংঘাতের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানও ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন সেহেলী সাবরীন। তিনি বলেন, ইউক্রেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে বেসামরিক লোকদের প্রাণহানি, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি এবং এর ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী সামাজিক–অর্থনৈতিক অবনতির ক্ষেত্রে। আমরা সংঘাত থামানোর আহ্বান জানাই এবং যে কোনো মূল্যে জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও মূলনীতিসমূহ রক্ষার বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে অবিচল রয়েছি।
মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেন সমন্বিত, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব ও সদস্য রাষ্ট্রসমূহরে পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানের প্রয়োজনীয়তা আমরা দেখি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ সমাধান যে কোনো পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়াই সার্বজনীনভাবে সবার জন্য অবশ্যই একভাবে প্রযোজ্য হবে। আর এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শান্তিমুখী পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভোটদানে বিরত দেশের তালিকায় ভারত, চীন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিউবা, কঙ্গো, আর্মেনিয়া, ভিয়েতনাম রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি তিন দেশ আফগানিস্তান, নেপাল ও ভুটান প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। জাতিসংঘে জান্তা–বিরোধী জাতীয় ঐকমত্য সরকারের (এনইউজি) প্রতিনিধিত্ব থাকা মিয়ানমারের ভোট পড়েছে প্রস্তাবের পক্ষে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর এই পর্যন্ত পাস হওয়া ৪টি প্রস্তাবের একটিতে পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। বাকিগুলোতে ভোটদানে বিরত থেকেছে।