রামনারায়ণ তর্করত্ন: বাংলা মৌলিক নাটকের প্রথম রচয়িতা

| বুধবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

রামনারায়ণ তর্করত্ন। নাট্যকার। আধুনিক বাংলা নাটকের পুরোধাপুরুষ মধুসূদনের আবির্ভাবের পূর্বে যে কয়েকজন বাঙালি নাট্যকার নবযুগের নবনাট্যধারার নান্দীপাঠ শুরু করেছিলেন, রামনারায়ণ তর্করত্ন তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৮২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার হরিনাভি গ্রামে তাঁর জন্ম। গ্রামের চতুষ্পাঠীতে বাল্যশিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে দশ বছর (১৮৪৩-৫৩) ব্যাকরণ, কাব্য, স্মৃতি ও ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরে দুই বছর হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে প্রধান পণ্ডিতপদে চাকরি করার পর তিনি সংস্কৃত কলেজে প্রায় ২৭ বছর অধ্যাপনা করেন। ১৮৮২ সালে এখান থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্বগ্রামে একটি চতুষ্পাঠী খুলে অধ্যাপনার মাধ্যমে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। সামাজিক সমস্যা নিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম নাটক লিখতে আরম্ভ করেন, এবং নিজে একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হলেও তার মতের উদারতা আমাদের মনে বিস্ময় উদ্রেক করে। তাঁর নাটকে একদিকে যেমন উপমা-অনুপ্রাসবহুল সংস্কৃত শব্দের আধিক্য আছে, অন্যদিকে আবার ছড়া, প্রবচন ও গ্রাম্য কথোপকথনের মধ্য দিয়ে দেশের নিজস্ব রসধারাও স্ফুর্তি লাভ করেছে। রামনারায়ণের সামাজিক সমস্যামূলক নাটকগুলি খুব প্রভাব বিস্তার করেছিল।
বাংলা মৌলিক নাটক রচয়িতা হিসেবেই রামনারায়ণের মুখ্য পরিচয়। বাংলা ভাষায় প্রথম বিধিবদ্ধ নাটক রচনার জন্য তিনি ‘নাটুকে রামনারায়ণ’ নামে পরিচিত ছিলেন। কুলীনকুলসবর্বস্ব (১৮৫৪) তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ নাটক। এতে হিন্দুসমাজে বহুবিবাহ প্রথার কুফল সম্পর্কে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়। তাঁর অন্যান্য রচনা: রত্নাবলী (১৮৫৮), নব-নাটক (১৮৬৬), বেণীসংহার (১৮৫৬), মালতীমাধব (১৮৬৭), রুক্মিণীহরণ (১৮৭১), কংসবধ (১৮৭৫) ইত্যাদি। পতিব্রতোপাখ্যান (১৮৫৩) তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ। এছাড়া তিনি যেমন কর্ম তেমনি ফল (১৮৬৩), উভয় সঙ্কট (১৮৬৯), চক্ষুদান প্রভৃতি প্রহসনও রচনা করেন। তাঁর অধিকাংশ নাটক ও প্রহসন বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চ, কলকাতার অভিজাত ধনিকশ্রেণীর নিজস্ব মঞ্চ এবং জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি নাট্যশালায় বহুবার অভিনীত হয়। ‘দি বেঙ্গল ফিলহার্মোনিক আকাদেমি’ থেকে তিনি ‘কাব্যোপাধ্যায়’ উপাধি লাভ করেন। ১৮৮৬ সালের ১৯ জানুয়ারি স্বগ্রামে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধগণপরিবহনের অভ্যন্তরে পরিবহন নম্বর প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হোক