রাবার ভিত্তিক শিল্পপণ্যের প্রসার ও রাবার উৎপাদনে উদ্বুব্ধ করতে নগরীর কাজীর দেউড়ি স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রাকৃতিক রাবার ও রাবার ভিত্তিক শিল্প পণ্য মেলা। বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত ৮দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে আগামীকাল বুধবার। তবে প্রথমবারের মতো মেলা আয়োজিত হওয়ায় দর্শনার্থী সমাগম আশাব্যাঞ্জক নয় বলে জানালেন অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, স্টলে তেমন দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। ফলে বিভিন্ন স্টলের প্রতিনিধিদের নিজেদের মধ্যে খোশগল্প করে সময় কাটাতে দেখা গেছে। মেলায় ২০টি রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ এবং ৬টি রাবার শিল্পপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
মেলায় অংশগ্রহণকারী রাবার বাগান মালিকরা জানান, বর্তমানে বিদেশ থেকে চাহিদার চেয়ে বেশি রাবার আমদানি হচ্ছে। ফলে দেশীয় রাবার বাগান মালিকরা উৎপাদিত রাবারের দাম পাচ্ছেন না। এছাড়া বাগান থেকে সংগ্রহ করা রাবারের কষ দিয়ে রাবার শিট তৈরি করে রাবার শিল্পপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন বাগান মালিকরা। অথচ রাবারের সেই কাঁচামাল কৃষি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও শিল্পপণ্য হিসেবে বিক্রির সময় মোট ২৫ শতাংশ ভ্যাট ও আয়কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু বিদেশ থেকে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে রাবার আমদানি হচ্ছে। বর্তমানে দেশে সরকারি রাবার বাগান রয়েছে ১৮টি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বাগান রয়েছে ১ হাজার ৩৫০টি। এরমধ্যে লোকসানের কারণে অর্ধেক রাবার বাগান উৎপাদনে নেই। গত ২০১০ সালে প্রতি কেজি রাবারের দাম পাওয়া যেত ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বর্তমানে সেটি নেমে এসেছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, যা দিয়ে উৎপাদন খরচও উঠছে না।
রাবার বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, রাবার চাষের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধনশীল চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। রাবার দিয়ে প্রায় ৪৬ হাজারের বেশি পণ্য উৎপাদিত হয়। দেশে বেসরকারি মালিকানায় বিভিন্ন সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের রাবারভিত্তিক প্রচুর পরিমাণ শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এ সব শিল্প-কারখানায় দেশে উৎপাদিত রাবার দিয়ে রিকশা ও অন্যান্য হালকা যানবাহনের টায়ার-টিউব, জুতা, স্যান্ডেল, হোসপাইপ, বাকেট, গ্যাসকেট, ওয়েলসিল, অটোমোবাইল পার্টস, টেঙটাইল জুট স্পেয়ার্স ইত্যাদি পণ্য তৈরি হয়। এসব পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব সাইফ উল্যাহ মনসুর দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাবার বাগানের উৎপাদিত কাঁচামাল রাবার শিট কোনোভাবেই শিল্পপণ্য হতে পারে না। আমরা এটিকে কৃষিপণ্যের ঘোষণা চাই। এছাড়া রাবার শিটের ভ্যাট-ট্যাঙ প্রত্যাহার, রাবার চাষে সরকারি প্রণোদনা এবং রাবারের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা দরকার। কারণ আমদানি শুল্ক কম হওয়ার কারণে দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে রাবার আমদানি হচ্ছে। এছাড়া রাবার চাষে বাগান মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। তবে দেশে রাবার শিল্প আরো সমৃদ্ধ হবে। বর্তমানে ভারতে রাবার রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু দেশের স্থানীয় বাজারে দাম কম হওয়ার কারণে রপ্তানিতে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না।