রাতের আলোর উজ্জ্বলতা দিয়ে বন্যার ঝুঁকি পরিমাপের অভিনব গবেষণা

| মঙ্গলবার , ২৮ জুন, ২০২২ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

রাতের আলোর উজ্জ্বলতা বিশ্লেষণ করে বন্যার ঝুঁকি পরিমাপের অভিনব এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গত ২০ বছরে এই ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় আট কোটি ৭০ লাখ মানুষ সরাসরি বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে – যারা নদ-নদীর দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বসবাস করে। আর যারা ঘন ঘন বন্যা বা অতিবন্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্যাটেলাইট থেকে তোলা রাতের ছবি বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন নদ-নদীর অববাহিকা এবং প্লাবন-ভূমিতে মানুষের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফলে আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। রাত্রিকালীন এই লাইট থেকে দেশের কোথায় কোথায় মনুষ্য-বসতি গড়ে উঠেছে – সে সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গত দুই দশকে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে রাতের উজ্জ্বলতা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বর্তমানে এই এলাকা স্মরণ কালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ভয়াবহ বন্যার জন্য বিজ্ঞানীরা জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করলেও তারা বলছেন হাওড় এলাকায় মানুষের নানা ধরনের অবকাঠামো তৈরির কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

এই গবেষণায় নাসার একাধিক স্যাটেলাইট থেকে তোলা বাংলাদেশের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই দশক ধরে তোলা এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখার চেষ্টা করেছেন কোথায় কোথায় আলোর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতের এই আলোর সাহায্যে বোঝা যায় কোথায় মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে এবং কোথায় বসতি হয়নি। গবেষণায় ভূ-উপগ্রহ থেকে তোলা রাতের আলোর পাশাপাশি ভৌগলিক তথ্য, ভূমির ব্যবহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জনসংখ্যার বণ্টন, বিদ্যুতের সরবরাহ ইত্যাদি তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে সারা দেশে গত ২০ বছরে কী পরিমাণ প্লাবন-ভূমি মানুষের দখলে চলে গেছে এবং এর ফলে কোন কোন অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আশরাফ দেওয়ান, পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ড. আরিফ মাসরুর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাহবুব মুর্শেদ।

রাতের আলোর ঔজ্জ্বল্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন নদ-নদীর দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ৯২% হ্রাস পেয়েছে, তৃণভূমি কমেছে ৬% এবং অনুর্বর ভূমি কমেছে ২৮%। নদীর এই দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নগরায়ন এবং কলকারখানার সংখ্যা। গত ২০ বছরে এই বৃদ্ধির হার ১২%।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘নাট হাত দিয়ে খোলার কথা নয়, এটি অন্তর্ঘাতমূলক কাজ’
পরবর্তী নিবন্ধকারো পুড়ল জমির দলিল কারোর টাকা