রাঙ্গুনিয়া সংরক্ষিত বনের ৪৮টি সেগুন গাছ চুরি, বিট কর্মকর্তাকে শোকজ

প্রতিদিন অবাধে কাঠ পাচারের অভিযোগ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের কোদালা বিটের সংরক্ষিত বন থেকে ৪৮টি সেগুন গাছ কেটে নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শীতল পালের নেতৃত্বে বনাঞ্চল পরিদর্শন করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় কোদালা বিট কর্মকর্তা নবীন কুমার ধরকে শোকজ করেছে বনবিভাগ। তাকে উত্তর বনবিভাগে বদলি করা হয়েছে। সম্প্রতি বনাঞ্চল উজাড় করা ৩৫০ ঘনফুট মূল্যবান সেগুন কাঠ জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকালে এই বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী বন সংরক্ষক শীতল পাল বলেন, ‘কোদালা বিটের ফুইট্টাগোধা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ৪৮টি মূল্যবান গাছ কেটে নেয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দুটি গামারি, একটি চাপালিশ এবং বাকিগুলো সেগুন গাছ। বনের গাছ কেটে নেয়ার ঘটনায় মামলার আবেদন করা হয়েছে। এটি তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই ঘটনায় বিট অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। তবে তার বদলিটা নিয়মিত বদলির অংশ। সম্প্রতি ৮ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মূল্যবান গাছ জব্দ করা হয়েছে। তবে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি।’
জানা যায়, কোদালা বিটের ৩ হাজার ৩৩ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে ৫৫০ একরে পুরোনো সেগুন বাগান রয়েছে। প্রতিটির দাম অন্তত ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোদালা বিটের হোছনাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুর সংরক্ষিত গভীর বনে প্রভাবশালী কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট নিয়মিত গাছ কাটার মহোৎসব চালায়। কোদালা বনবিটের ৭/৮ কিলোমিটারের কাছের এসব গাছ কেটে নিতে সক্রিয় রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। তবে বনপ্রহরীদের সাথে কাঠ পাচারকারীরা আঁতাত করে এসব গাছ কাটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গাছ কাটার জন্য ব্যবহার করা হয় আধুনিক যন্ত্র। কাটার পর যাতে কেউ বুঝতে না পারে তাই অনেক ক্ষেত্রে গাছের অবশিষ্টাংশ শিকড় পর্যন্ত উপড়ে ফেলা হয়। কাঠ পাচারকারীর সঙ্গে সখ্যের
অভিযোগ অস্বীকার করে কোদালা বনবিটের সদ্য বদলি হওয়া কর্মকর্তা নবীন কুমার ধর দাবি করেন, বিটের ৭/৮ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও এগুলো গহীন জঙ্গলে। তবে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এসব গাছ কাটার সাথে জড়িত বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। খবর পেলেই তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাছাড়া জনবল সংকট রয়েছে কোদালা বিটে। বিশাল বন রক্ষায় মাত্র দু’জন বনপ্রহরী রয়েছে। তাকে দেয়া শোকজের জবাব দিয়েছেন বলে তিনি জানান। জানা যায়, শুধু কোদালা বিট এলাকা থেকেই নয়, রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নিয়মিত কেটে ফেলা হচ্ছে মূল্যবান গাছ। সংরক্ষিত বন থেকে গাছ কেটে পাচারের জন্য আলাদা সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে জানা গেছে। তারা নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছে দেয় চুরি করে কাটা গাছগুলো। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পোমরা বন বিটের শুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ির চেক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন অবাধে কাঠ পাচার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ফাঁড়ির অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নির্ধারিত মাসোহারা দেয় পাচারকারী সিন্ডিকেট।
এই বিষয়ে সহকারী সংরক্ষক শীতল পাল বলেন, পরীক্ষণ ফাঁড়িতে মাসোহারা নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষায় তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্কেট নিয়ে বিরোধ, রাউজানে ছুরিকাঘাতে যুবক আহত
পরবর্তী নিবন্ধমুসলিম এডুকেশন সোসাইটির ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল