রাঙ্গুনিয়ায় শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্কের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হামলার ঘটনায় বন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের হয়েছে।
উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর এলাকার মো. সেলিমের স্ত্রী নূরজাহান বেগম (৪১) বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে তিনি দীর্ঘ ৬০ বছরের ভোগদখলীয় বসতঘর ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে না পারায় বন অধিদপ্তর পূর্ব নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
আদালত মামলাটি শুনানি শেষে পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে এর তদন্তভার অর্পণ করে।
মামলায় বিবাদীরা হলেন শেখ রাসেল এভিয়ারী পার্কের আউটসোর্সিং-এর বনকর্মী মো. ফোরকান (৩৭), ইকবাল হোসেন (৪০), মো. আনু (৩৯), কোদালা বিট কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান (৫৩), উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুম কবির (৫২), বন প্রহরী আবদুল হাই (৪০), মো. ইসমাঈল (৪২), আকতার কামাল (৪০), সালে আহম্মদ (৪৫), মাহবুল আলম (৪৩), মো. আনোয়ার (৫০) ও বাগান মালী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া (২৯)।
মামলার বাদী নূরজাহান বেগম ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের জঙ্গল নিশ্চিন্তাপুর এলাকায় দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে বসতঘর স্থাপন করে সেখানে বসবাস করে আসছেন তারা।
সম্প্রতি অভিযুক্ত আসামীরা গত ১৫ মে নূরজাহান বেগমের স্বামী সেলিম ও দেবর জসীমের নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ওই স্থানে বসবাস করতে পারবে না বলে জানায়।
এরপরের দিন দাবিকৃত টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা প্রদানও করেন। বাকি টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে কোনোরকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই গত ৩১ মে সকালে তাদের ঘরসহ পাশের করিম, রহিম ও সোলাইমানদের বাড়িঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেয় এবং নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ৫ লক্ষ টাকা দামের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন মামলার বাদী নূরজাহান বেগম।
এ ব্যাপারে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম জাফর আলম বলেন, “আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি করে এবং অভিযোগ তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে দায়িত্ব দেয়।”
পাল্টা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কের সহকারী পরিচালক হাসিবুর রহমান তারা পাল্টা মামলার বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করেন তিনি।
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “শেখ রাসেল এভিয়ারি এন্ড ইকো পার্ক সীমানার উত্তর-পশ্চিম দিকে জঙ্গল নিচিন্তাপুর এলাকার কাছাকাছি পার্কের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করেন স্থানীয় সেলিম এবং জসিম গং। খবর পেয়ে এসব ঘর উচ্ছেদে যায় বনবিভাগের লোকজন। উচ্ছেদ অভিযান শেষে ফেরার পথে বনবিভাগের লোকজনের ওপর দেশীয় অস্ত্র হাতে অতর্কিত হামলা চালায় সেলিম এবং জসিম গং-এর নেতৃত্বে ২০/৩০ জন নারী-পুরুষ। হামলায় ধারালো কিরিচের কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুম কবির, বিট কর্মকর্তা ইসমাঈল হোসেন, বাগান মালী জ্যোতিময় বড়ুয়াসহ ১৪ বনকর্মী।” এখনো বিট কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এই ঘটনায় কোদালা বিট কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জনকে আসামী করে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।