রাঙ্গুনিয়ায় কেন এত অগ্নিকাণ্ড

এক মাসে ৮ ঘটনা

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় অগ্নিকাণ্ড যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ায় ৮টি পৃথক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৪টি বসতঘর, ২টি দোকান, ১টি ট্রাক, ২টি খড়ের গাদা, ৩টি গরু, একটি মুরগীর খামার পুড়ে গিয়ে সবমিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার পারুয়ায় একটি বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের ৫ জন নিহত ও ১ জন আহতের ঘটনা পুরো দেশের শীর্ষ সংবাদে রূপ নিয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। এতে বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু কেন এত অগ্নিকাণ্ড? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. জাহেদুর রহমান বলেন, আগুন লাগার অনেক কারণ রয়েছে। মূলত মানুষের অসচেতনতা, অসতর্কতা এবং আইন না মানার প্রবণতার কারণেই বেশি অগ্নিকাণ্ড হয়। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ৮০ শতাংশ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব গোলযোগ সাধারণত নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার, বৈদ্যুতিক তার, সার্কিট ইত্যাদি নিয়মিত চেক না করা ইত্যাদি কারণে হতে পারে। অন্যদিকে নিম্ন মানের গ্যাস সিলিন্ডার, চুলা ব্যবহারে সতর্কতার অভাবও অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক তার, সুইচ নিয়মিত চেক করতে হবে। সিগারেট খেয়ে কিংবা ম্যাচের কাটি জ্বালিয়ে কোথাও ফেলার আগে নিভিয়ে ফেলতে হবে। ঘরে দাহ্য পদার্থ সতর্কভাবে রাখতে হবে। নিয়মিত চেক করতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে কিংবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুরো ঘর চেক করতে হবে। সর্বোপরি সচেতন হতে হবে।

রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সুমন বলেন, শীতের সময় আগুন একটু বেশি লাগে। কারণ তখন মানুষের সতর্ক থাকার প্রবণতা খুবই কম। এছাড়া মানুষ আইন মানতে চাই না। ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন না নিয়েই এখানে বহুতল ভবনসহ নানা দাহ্য প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন স্থানের অলিগলিতে রাস্তাগুলো খুবই ছোট। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করে না। ২০ ফুট প্রসস্ত রাস্তা ছাড়া ৬ তলার উপরে ভবন করার নিয়ম নেই। শুধু তাই নয়, এখানে সহজে পানির উৎস্য খুজে পাওয়া যায় না। কারণ এখানে পুকুরখাল ভরাট হচ্ছে অবাধে।

এভাবে নানা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৮ তলা, ৯ তলা পর্যন্ত ভবন রয়েছে। এসব বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোন যন্ত্র নেই। নেই ইমার্জেন্সি এক্সিট দরজা। এমনকি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডারও নেই কোন কোনটিতে। আমাদের যেই পাম্প রয়েছে তাতে ৪/৫ তলার উপরে পেসার যাবে না। লিচুবাগানে বহুতল ভবন বেশি। সেখানে অলিগলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের জায়গা নেই। একমাত্র কর্ণফুলী ও মাদ্রাসার একটি পুকুর ছাড়া পানির কোন উৎস্য নেই। এসব স্থানে আগুল লাগলে প্রাণহীনর ঘটনাসহ ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষকে সচেতন করতে প্রতি সপ্তাহে মহড়া হয়। গণসংযোগ করা হয়। পানির উৎস খোঁজার (টপোগ্রাফি) কাজও নিয়মিত করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হল মানুষের সহযোগিতা খুবই কম পায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়াতে মানুষের সচেতন হওয়ায় বিকল্প নেই।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, আগুন কখন কোথায় লেগে যায় তা আগেবাগে বোঝার উপায় নেই। তবে সচেতন হলে দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য আগুন নেভানোর চেয়ে আগুন যেন না লাগে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এর পুনরাবৃত্তি রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধসিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল আগুনের সূত্রপাত রান্নাঘরে