রাঙ্গুনিয়ার জন্য বরাদ্দ ২৪ মেট্রিক টন সার অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ

শো’কজের পর ক্ষমা চেয়েছেন ডিলার মালিক

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চাষিদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪ মেট্রিক টন ডিএপি সার ও ২০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার অন্যত্র বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ডিলারের বিরুদ্ধে। গত ১০ সেপ্টেম্বর বিসিআইসি’র গুদাম থেকে সার উত্তোলনের পর অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয় বলে জানা যায়। এ ঘটনায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের সার ডিলার রাসেল এন্ড ব্রাদার্সকে শো’কজ করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার। সার ডিলারের মালিক মো. রাসেল তালুকদার আর কখনো এ রকম ভুল হবে না মর্মে ক্ষমা চেয়ে গতকাল সোমবার শো’কজের জবাব দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কৃষি কর্মকর্তা। এদিকে লালানগর ইাউনিয়নের ঘাগড়া খিলমোগল গ্রামের কৃষক নুরুল আজিম জানান, ইউনিয়নের আমন আবাদকারী কৃষকরা ইউনিয়নের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সার না পেয়ে পাশের ইউনিয়নগুলোতে দোকানে দোকানে সারের জন্য ধর্ণা দিচ্ছে। সরকার কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি দিয়ে সঠিক সময়ে সার পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিলেও অসাধু ডিলাররা সার উত্তোলন করে চড়া দামে বাইরে বিক্রি করে দেয়ায় স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান। শস্য ভান্ডার গুমাই বিলের কৃষক আবদুস সালাম জানান, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫টি সারের পাইকারি ডিলার ও ৬৩ জন খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি মুনাফার আশায় অনেক ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসব সার ডিলারদের বিরুদ্ধে। কৃষকদের অভিযোগ, শুধুমাত্র নোটিশ দিয়েই দায় সারেন উপজেলা কৃষি অফিস। এতে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়ে বাড়তি দামে সার কিনতে বাধ্য হন সাধারণ কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কোন ডিলার গুদামে সার তোলার পর তার সঠিক বণ্টনে উপজেলা কৃষি অফিসারকে অবহিত করতে হয়। এছাড়া উত্তোলনকৃত সার স্ব স্ব ইউনিয়নের খুচরা সার ডিলার এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার প্রতিষ্ঠান ‘রাসেল এন্ড ব্রাদার্স’ চার মেট্রিক টন ডিএপি এবং ত্রিশ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার গুদাম থেকে উত্তোলন করলেও উপজেলা কৃষি অফিসকে অবহিত করেনি। উল্টো এব্যাপারে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তার কাছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী রাসেল তালুকদার ডিএপি সার অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর কৃষি অফিস খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ৪ মেট্রিক টন ডিএপি সার ও ৩০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উত্তোলর করেন ডিলার রাসেল তালুকদার। তৎমধ্যে মাত্র ১০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ইউনিয়নের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে দেন। বাকি সার তিনি রাঙ্গুনিয়ায় না এনে অন্যত্র বিক্রি করে দেন।
কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, আমনের ভরা মৌসুমে সারের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও সার উত্তোলন করে বেশি লাভের জন্য উপজেলার বাইরে বিক্রি করে দেয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যা সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। এঘটনায় রাসেল এন্ড ব্রাদার্সের মালিক রাসেল তালুকদারকে শো’কজ করা হলে তিনি গতকাল ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাসেল তালুকদার বলেন, সার গুদামেই তোলা হয়েছিল। তবে কৃষি অফিসকে জানাতে গেলে উপজেলা কৃষি অফিসার অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি খেয়াল করেননি। তবে গুদামে উত্তোলনকৃত সার লালানগর ইউনিয়নের খুচরা ডিলার এবং নিজ ব্যবস্থাপনায় সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। কিন্তু লালানগর ইউনিয়নের কৃষকরা সার পায়নি এবং খুচরা বিক্রেতাদের বিতরণ রেজিস্টারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নেয়া হয়নি বলে জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধবুলেট প্রুফ স্যালুন ক্রয় থেকে সরে এসেছে রেল