রাঙ্গামাটির পাহাড়ে,
দুপুর বেলা আহারে,
নাম ধরে কে বাঁশরী বাজায়।
‘ভালো লাগে না’ রোগ থেকে মুক্তি, ইট পাথরের যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুটা দূরে, মাথার ভেতর অনবরত ভন ভন শব্দ হতে দূরে কোথাও একদিনের জন্য বাঁধন ছাড়া হারিয়ে যাওয়া। হোছাইন পরিবারের চল্লিশ ও কাছের জনা বিশেক নিকটাআত্মীয় নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি ভ্রমণ। যাওয়ার বাহন রাঙামাটি লাইনের চল্লিশ সিটের একটি বাস ও দুটি ব্যক্তিগত কার।
আগ্রাবাদ নিজের বাসার কাছে উপস্থিত বাস, সকাল ৮টায় যাত্রার সময় নির্ধারিত থাকলেও হালিশহর ও শান্তিবাগের যাত্রীদের এসে পৌঁছাতে সকাল নয়টা। ইতোমধ্যে বাসায় রান্না করা দুপুরের খাবার, নাস্তা, পানি ও সাউন্ড সিস্টেম সব গাড়িতে তোলা হল। বড় ভাইয়ের পরিবার ডিসি হিলের সামনে থেকে, দুই নম্বর গেইট থেকে ভাগ্নি হিমু ও হিমুর বর, রুবি গেইট থেকে ভাইরা মহসিন ও শালি রুপা, সর্বশেষ অক্সিজেন থেকে শেফুর বড় আপা আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। সবচেয়ে আনন্দ করছে জুনিয়র গ্রুপ, তাদের ঠাঁই হয়েছে বাসের পিছনের দিকে। সাউন্ড সিস্টেম তাদের দখলে, যে যার ইচ্ছা মতো গান করছে, গান শুনছে। রাঙামাটি পৌঁছাতে আরো দুবার বিরতি হলো। একবার জলবিয়োগ বিরতি ও আরেকবার চা বিরতি। রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ, সুবলং ঝর্না, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান হলেও আমাদের এবারের লক্ষ্য আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট ও পলওয়েল পার্ক।
রাঙামাটির আরণ্যক হলিডে রিসোর্টে পৌঁছাতে সকাল গড়িয়ে দুপুর সাড়ে বারোটা। তালতো জসিম ভাইয়ের পরিবার ও শেফুর মেঝ আপা ও ত্রপা এবং নাছিরের গাড়ি উপস্থিত। টিকেট কেটে আরণ্যক রিপোর্টে প্রবেশ করি ষাট জনের বহর। কিছুক্ষণ ঘুরাফেরা ছবি তোলা শেষে কেন্টিনের সামনে আইল্যান্ডে দুপুরের খাবার। খাওয়া শেষে টিকেট নিয়ে বোঁ যোগে হ্যাপি আইল্যান্ড ওয়াটার পার্কে। আমার আম্মার উঁচু-নীচু সিঁড়ি বেয়ে উঠা নামায় বেশ কষ্ট হলো। বড় ভাই আসন নিয়েছে কফি পার্কে। যে যার ইচ্ছা মতো কফি, আইসক্রিম, চিপস ও চকলেট নিচ্ছে ভাইজানের সৌজন্যে। ওয়াটার পার্কে মনপ্রাণ শান্ত করার পর ফটোসেশন চলল অনেকক্ষণ। তারপর ফেরার তাড়া। বড় ভাবির ট্রাভেল ব্যাগ হারানো ও খুঁজে বের করতেই সন্ধ্যা। আরণ্যক রিপোর্টের বাইরে মসজিদে মাগরিব নামাজ শেষে সন্ধ্যা নিয়ন বাতির আলোতে পলওয়েল পার্কে। রুটিন কাজ সারার মতো পলওয়েল পার্কে ঢুকে লাভ পয়েন্টে কয়েকজনের ফটোসেশন। এবার ফেরার প্রস্তুতি। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি ধরতে রাত আটটা। অন্ধকার ভেদ করে গাড়ি ছুটছে রাঙ্গুনিয়া লালানগর ছোট ভাই নাজিমের বড় ভাইরার বাড়ি অর্থাৎ রুপা ও হিমুদের বাড়িতে। রাতের খাবার ওখানে। খাওয়া শেষে বাড়ি ফেরার তাড়া।