বিজ্ঞানীদের দাবি, ১৯৮৮ সাল থেকে পৃথিবীর দিকে রেডিও সংকেত পাঠাচ্ছে এক অজানা উৎস। তবে ঠিক কোন উৎস এই বেতার তরঙ্গ পৃথিবীর দিকে পাঠাচ্ছে, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই গবেষকদের। এমনকি তরঙ্গের ধরন অথবা বিদ্যমান কোনো মডেলের মাধ্যমেও এর ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি। গবেষকরা বলছেন, ৩৫ বছর ধরে এই উৎস নিয়মিতই ২০ মিনিট দীর্ঘ ‘শক্তিচ্ছটা’ পাঠাচ্ছে, যেগুলোর তীব্রতা একে অপরের চেয়ে আলাদা। খবর বিডিনিউজের।
এই ধরনের নির্গমন কিছুটা ‘পালসার’ বা দ্রুতগতির ‘রেডিও ব্লাস্ট’ থেকে বেরিয়ে আসা বিস্ফোরণের মতো দেখায়। আর এগুলো স্থায়ী হয় কয়েক মিলিসেকেন্ড থেকে কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত। তবে, নতুন করে খুঁজে পাওয়া উৎসের পাঠানো রেডিও সংকেতের স্থায়ীত্বকাল থাকে ২১ মিনিট পর্যন্ত, যা আগের ব্যাখ্যাগুলোর হিসাবে অসম্ভবই বলা চলে। ‘পালসার’ এক ধরনের নিউট্রন নক্ষত্র, যা অনেক দ্রুত আবর্তিত হয় ও বিভিন্ন রেডিও সিগনাল নিক্ষেপ করে। এগুলোর কোনোটি যখন পৃথিবী অতিক্রম করে, তখন খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে এর উজ্জ্বল নির্গমন লক্ষ্য করা যায়, অনেকটা ঘুর্ণায়মান লাইটহাউজের আলোর মতো।
বিজ্ঞানীরা ধারণা প্রকাশ করেন, পালসারের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি এর ঘুর্ণনের মাত্রা যথেষ্ট হলেই এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে। এমনটি না ঘটলে পৃথিবী থেকে ওই পালসার দেখার শক্তি থাকবে না। এর থেকেই তৈরি হয়েছে ‘পালসার ডেথ লাইন’ ডায়াগ্রাম। আর এতে উল্লেখ রয়েছে যে এইসব উৎস শনাক্ত করতে এগুলো অবশ্যই শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি যথেষ্ট গতিতে ঘুর্ণায়মান হতে হবে।
নতুন খুঁজে পাওয়া এই উৎসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিপিএমজে১৮৩৯–১০’। তবে, এটি ডায়াগ্রামের ‘ডেথ লাইনের’ অনেক ওপরে অবস্থান করছে। এটি যদি কোনো পালসার হয়, তবে এটি এমন উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা বিজ্ঞানীদের ধারণায় ‘অসম্ভব’ হিসেবে বিবেচিত। এমনকি এটি একটি অতি চৌম্বকীয় ‘শ্বেত বামন’ও হতে পারে, যার মানে হচ্ছে, এগুলো এমন ধরনের নিউট্রন তারা, যেখানে ব্যাপক শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। তবে গবেষকরা বলছেন, সেগুলো থেকে এই ধরনের নির্গমন সাধারণত ঘটে না।
বিভিন্ন পুরনো নথি ঘেঁটে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, অন্তত ১৯৮৮ সাল থেকে পৃথিবীতে এই ধরনের সংকেত আসছে। তবে সেটি ডেটা সংগ্রাহকদের চোখে পড়েনি। এই উৎস শনাক্ত করার পর গবেষকরা বিভিন্ন রেডিও আর্কাইভ যাচাই করে খুঁজে পান ৩৫ বছর ধরে ক্রমাগত সংকেত পাঠিয়ে যাচ্ছে এটি।
কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ভিক্টোরিয়া এম কাস্পি বলেন, ভবিষ্যতে এমন অনেক রহস্যই সামনে আসবে। এই ধরনের ডেটায় আর কী লুকিয়ে থাকতে পারে বা বিভিন্ন জোতির্বিজ্ঞানের সময়কালে কী ধরনের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ পাবে, তা কেবল সময়ই বলে দেবে।
নতুন আবিষ্কৃত উৎস কতটা অস্বাভাবিক, সে সম্পর্কেও এই ডেটায় কিছুটা ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে, ওই ডেটায় অন্যান্য বস্তুর অনুরূপ সংগ্রহ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। আর এর মাধ্যমে গবেষকরাও এই নতুন করে খুঁজে পাওয়া নির্গমনের পেছনের কারণ বুঝতে সহায়তা পাবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।
এই অনুসন্ধান তুলে ধরা হয় ‘এ লং–পিরিয়ড রেডিও ট্রানজিয়েন্ট অ্যাক্টিভ ফর থ্রি ডিকেইডস’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘নেচার’–এ।