রমজানে ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্য ব্যবস্থা

হাসিনা আকতার লিপি | সোমবার , ২১ মার্চ, ২০২২ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র মাহে রামজান শুরু হতে আর অল্প কিছুদিন বাকি। প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। ডায়াবেটিক রোগী রোজা রাখতে পারবে কি পারবে না তা জানতে হবে এখনই তার ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে। ঔষধ/ইনসুলিন কখন-কি ডোজ অর্থাৎ পরিমান এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এখনই জানার সময়। এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ডায়বেটিক রোগীর খাদ্য-ব্যবস্থা। কি খাবেন, কি খাবেন না তা নিয়ে ডায়বেটিক আক্রান্ত রোগীরা ভীষণ বিভ্রান্ত থাকেন। কারন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক না রাখতে পারলে সমস্যা সৃষ্টি হবে।
আন্তর্জাতিক ডায়বেটিক ফেডরেশন (আই ডি এফ) রমজাম মাসে ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে-গাইড লাইন প্রকাশ করেছে।
কিছু সংখ্যক জটিল রোগী বাদে অধিকাংশ ডায়বেটিক রোগী-বড় ধরনের সমস্যা ছাড়াই রোজা পালন করতে পারেন। রোজা পালনের সময় কিছু রোগী যদি অনিয়ম করে বিশেষ করে খাবার কম খায়, অথবা ব্যায়াম বেশী করে তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।
যেমন ঃ-
১. হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা অনেক কমে যেতে পারে।
২. হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
৩. ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা।
৪. কিটো এসিডোসিস এবং
৫. থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধা।
ঝুঁকি বিবেচনা করে চিকিৎসকরাই বলে দিবেন, কারা রোজা পালন করতে পারবেন আর কারা ঝুঁকিতে আছেন। যাদেরকে বলবেন রোজা পালন করার জন্য উপযুক্ত তারা অবশ্যই ঔষধের নিয়ম, খাদ্যের নিয়ম এবং ব্যায়ামের ব্যাপারে খুব ভালে করে জেনে, বুঝে নিবেন এবং মানবেন। আশা করা যায় কোন রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াই নিরাপদে সুস্থ শরীরে স্বাভাবিক মানুষের মতোই রোজা পালন করতে পারবেন।
যা রমজানে খাদ্যোভাসে মনে রাখা জরুরি
তিন বেলা (ইফতার, সন্ধ্যারাত, সেহরী) খাবার খেতেই হবে।
না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না। পরিপূর্ণ খাবার খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
খাবারের ক্যালরী অন্য সময় যা ছিল তাই থাকবে, কমানো যাবে না, ক্ষতি হবে।
রমজানে যা করা যাবে না
১. চিনি, গুড়, মধু, এবং জিলাপী মিষ্টি জাতীয় খাবার একদম খাওয়া যাবে না।
২. অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না, স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যাবে।
৩. ইফতারে ভাজা-পোড়া এবং তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
রমজানে ডায়বেটিক রোগীর খাদ্য তালিকা
ইফতার ঃ-
প্রথমে পানীয় পান করতে হবে। সারাদিন না খেয়ে থাকার দরুন এমন খাবার খেতে হবে যা দ্রুত এনার্জি দেয়। যেমন ফলের জুস (চিনি ছাড়া) আনারস/ কমলা/ মোসাম্বী/ আঙ্গুর/তরমুজ/মিল্ক সেক/টক দই দিয়ে লাচ্ছি/ ইসুব গুলের ভূষির সরবত ইত্যাদি।
খেজুর ৩-৪ টা
সুপ/চিড়া+কলা/খিচুরী/ওটস/মোমো/নুডলস (সিদ্ধ)/কর্নফ্লেক্স/দুধের তৈরী খাবার
(চিনি ছাড়া) ইত্যাদি।
সন্ধ্যারাতে ঃ-
ভাত- ২-৩ কাপ।
মাছ অথবা মুরগীর মাংস।
শাক সবজী।
মনে রাখতে হবে
রোজা পালনের আগে অবশ্যই ডায়াবেটিক রোগীকে তার ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং ঔষধ ও ইনসুলিনের মাত্রা কোন সময়ে কতোটুকু নিতে হবে, জানতে হবে।
অবশ্যই খাদ্য ব্যবস্থা পুষ্টিবিদের কাছ থেকেই জেনে নিতে হবে। তবেই আশা করা যায়- পবিত্র রমজানে সুস্থ শরীরে এবং জটিলতা ছাড়াই রোজা পালন করা সম্ভব হবে।
লেখক : ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ ও কনসালট্যান্ট, ল্যাব এইড ও পার্ক ভিউ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক লিমিটেড, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকান্ত ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধম্যাক্সিম গোর্কী : মানব অরণ্যের অপ্রাকৃতিক অরণি