রপ্তানি পণ্যের কন্টেনার না নিয়েই বন্দর ছাড়ছে জাহাজ

কেডিএস লজিস্টিকে প্রাইমমুভার চালক-সহকারীর ধর্মঘট বন্দর ও আইসিডি মিলে প্রায় এক হাজার কন্টেনার আটকা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার না নিয়েই চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ছে জাহাজ। দেশের ১৯টি আইসিডির অন্যতম কেডিএস লজিস্টিকের প্রাইমমুভার চালক এবং সহকারীরা কন্টেনার পরিবহন বন্ধ রাখায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এই সংকট তৈরি হয়েছে। ওই আইসিডিতে ৫ শতাধিক রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার আটকা পড়েছে। অপরদিকে গত দুদিনে আমদানি পণ্য বোঝাই ৫ শতাধিক কন্টেনার বন্দরের ইয়ার্ডেও আটকা পড়েছে।
কেডিএস লজিস্টিকে প্রতিদিন দুই শতাধিক কন্টেনারে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের রপ্তানি পণ্য স্টাফিং করা হয়। কন্টেনার বোঝাই এসব পণ্য আইসিডি থেকে পাঠানো হয় বন্দরে। বন্দর থেকে জাহাজে বোঝাই করে নানা দেশে রপ্তানি হয়। একই সাথে নানা দেশ থেকে আসা তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালসহ ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য বন্দরের ইয়ার্ড থেকে নেওয়া হয় ওই আইসিডিতে। ওখান থেকে এলসিএল কন্টেনারগুলো আনস্টাফিং করে এবং এফসিএল কন্টেনারগুলো সরাসরি সরবরাহ দেওয়া হয় আমদানিকারককে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫শ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য বন্দর থেকে আনা-নেওয়া করা হয়।
কেডিএস লজিস্টিকের মালিকানাধীন ৯৭টি প্রাইমমুভারে এসব কন্টেনার আনা-নেওয়া করা হয়। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে প্রাইমমুভারের চালক ও সহকারী বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট শুরু করলে কন্টেনার পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য না নিয়ে কয়েকটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করেছে। এর মধ্যে এমভি হারম্যান শেপারস নামের একটি জাহাজে ৬৪ টিইইউএস এবং অপর একটি জাহাজে ৫৫ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার ছিল। এর বাইরে গত তিন দিনে আরো কয়েকটি জাহাজ সময়মতো রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হুক পয়েন্টে পায়নি। এসব জাহাজও কন্টেনার রেখে নোঙর তুলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার রেখে জাহাজ চলে যাওয়ার ঘটনা রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি কোনো পণ্য ইউরোপ, আমেরিকায় যায় না। এখান থেকে যাওয়া কন্টেনার সিঙ্গাপুর, কলম্বো কিংবা পোর্ট কেলাংয়ের ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে মাদার ভ্যাসেলে বোঝাই করা হয়। ওখান থেকে নানা দেশে নেওয়া হয়। তাই সময়মতো কন্টেনার ট্রানশিপমেন্ট পোর্টে না পৌঁছালে মাদার ভ্যাসেল মিস হয়ে যায়। এতে করে রপ্তানি পণ্যের চালানটি সময়মতো ক্রেতার হাতে পৌঁছে না। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক নানাভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন।
গত তিন দিনে কেডিএস লজিস্টিকের ৫ শতাধিক কন্টেনার আটকা পড়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নানা দাবি নিয়ে ট্রেইলর চালক ও সহকারীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে করে আমাদের আইসিডি থেকে কোনো কন্টেনার বন্দরে যাচ্ছে না। বন্দর থেকেও কোনো কন্টেনার আমাদের আইসিডিতে আসছে না। এটি বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে। ট্রেইলর চালক ও সহকারীরা বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছেন। যেগুলো মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
কেডিএস লজিস্টিকের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে কেডিএস লজিস্টিকের যেসব ট্রেইলর চালক ও সহকারী রয়েছেন তারা কেডিএসের একটি সিস্টার কর্নসার্নের স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন। এখন তারা আর ওই প্রতিষ্ঠানের নয়, সরাসরি কেডিএসের স্টাফ হিসেবে স্থায়ী অ্যাপয়েনমেন্ট চাচ্ছেন। এছাড়া ২০১১ সাল থেকে গ্র্যাচুয়েটিসহ বিভিন্ন সুযোগ দাবি করছেন। লাইসেন্স না থাকলেও তাদেরকে ড্রাইভার হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ দিতে হবে-এমন দাবিও উত্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, কর্ম ঘণ্টা থেকে শুরু করে ট্রিপ সংখ্যা নিয়েও তারা অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করেছেন। এসব দাবি মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
চালকদের একজন নেতা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। কিন্তু আমাদের কোনো অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার নেই। সুযোগ-সুবিধা নেই। রাস্তায় জ্যামে আটকা থাকলেও ওভারটাইম নেই। বছরের পর বছর কাজ করছি। অথচ নানাভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কেডিএসের ট্রেইলরের চাকা ঘুরবে না।
এদিকে কেডিএস লজিস্টিকে ধর্মঘটে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সময়মতো কন্টেনার ক্রেতার কাছে না পৌঁছালে ও কাঁচামাল না পেলে তারা সংকটে পড়বেন বলে জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে শোকের ছায়া
পরবর্তী নিবন্ধআরও তিন রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার দুজনকে রিমান্ডে চায় পুলিশ