রপ্তানি আয় খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে

| বুধবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

রপ্তানি আয় খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাপক। দিন দিন আগের রেকর্ড ভঙ্গ হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রেখে গেল ডিসেম্বরে আবার একক মাসে রেকর্ড ৪৯০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশের বেশি। গত রোববার নতুন অর্থবছরের দ্বিতীয় দিন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এমন সুখবরই দিয়েছে। প্রবৃদ্ধিতে বড় উল্লম্ফনের পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আয় এসেছে এ খাত থেকে। গত ৩ জানুয়ারি ‘এক মাসে রপ্তানি আয়ে আরেকটি রেকর্ড’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, সদ্য সমাপ্ত বছরের সর্বশেষ মাস ডিসেম্বরে মোট ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, এর চেয়ে বেশি আয় দেশে আসেনি আগে। এর আগে একক মাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছিল সদ্যসমাপ্ত বছরের অক্টোবরে। ওই মাসে মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলারের; প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছিল ৬০ শতাংশের বেশি। ইপিবির তথ্য বলছে, এর আগের মাস ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেও এক মাসে রেকর্ড পরিমাণ ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৮ শতাংশ। এক মাসের রপ্তানি আয়ের হিসাবে রেকর্ড গড়া সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের পর নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয় ৪০৪ কোটি ডলারের।
সবশেষ তিন মাসের চাঙ্গা রপ্তানি আয়ের ওপর ভর করে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে রপ্তানিও বেড়েছে অনেক, মোট আয় হয়েছে দুই হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার ৯২৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে এ সময়ের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। গতকাল ইপিবি থেকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ মাসে ৩৯১ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ঠিক এক বছর আগের ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৩০ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পণ্য। এর মানে হচ্ছে গেল ডিসেম্বরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশের ৭৫০টি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। তবে করোনাকালে একেবারেই নতুন পণ্য হিসেবে রপ্তানি খাতে আয় বাড়িয়েছে অপ্রচলিত বেশকিছু পণ্য। আশার আলো দেখানো এসব পণ্য হচ্ছে- ওষুধ, ফলমূল, পাট ও পাটজাত পণ্য, কাঁচা পাট, শাক-সবজি, জুতা (চামড়া ব্যতীত), আসবাব, কার্পেট, জুট ইয়ার্ন এন্ড টোয়াইন, গলফ সাফট, তামাক, জাহাজ, চা, হ্যান্ডিক্রাফটস, ছাই। এসব পণ্য রপ্তানি করে গত অর্থবছরে আয় হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। আয়ের পাশাপাশি রীতিমতো বৈচিত্র্য এনেছে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, গাউন, মেডিকেল ইকুইপমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী পণ্য। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের চাহিদা এখন তুঙ্গে।
এদিকে, দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই অর্থনীতির উন্নয়নে ১০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান করার উদ্যোগ নিয়েছে। কেননা তাদের এ কথা স্মরণে আছে যে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার পর, বাংলাদেশের জন্য অসংখ্য সম্ভাবনা তৈরি হবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে চাহিদা তৈরি হবে নতুন পণ্যের। অর্থনীতির আকারও বড় হবে। সরকারের নেয়া নানা অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে। তখন পণ্য পরিবহন, বন্দরের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। এ সবকিছুকে বিবেচনা করে আগামী দশকে অর্থনীতির চাহিদার সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠন।
গত ৪ ডিসেম্বর এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, এলডিসি পরবর্তী পরিবর্তিত বৈশ্বিক চাহিদা মোকাবিলায় খাতভিত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে একটি ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই। আগামী মাসেই এ সংক্রান্ত ধারণাপত্রটি সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। রপ্তানি আয় খাতে যেভাবে অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা তার সুন্দর ফল উপভোগ করতে পারবো নিঃসন্দেহে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে