রজনীকান্ত সেন। তিনি কবি গীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। বেশ কিছু কবিতা লিখলেও তাঁর রচনার অধিকাংশই সংগীত। বাংলা ভাষায় যে পাঁচজন কবি কবিতার পাশাপাশি সংগীত রচনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বলা হয় ‘পঞ্চকবি’। রজনীকান্ত সেন সেই পঞ্চকবিদেরই একজন।
রজনীকান্ত সেনের জন্ম ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই পাবনা জেলার ভাঙাবাড়িতে। বাবা পিতা গুরুপ্রসাদ সেন ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ। রজনীকান্ত কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৮৩), রাজশাহী কলেজ থেকে এফএ এবং কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বিএ ও বিএল (১৮৯১) ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি রাজশাহী কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। কিছুদিন তিনি নাটোর ও নওগাঁয় অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রজনীকান্ত পিতার নিকট সঙ্গীত শেখেন এবং মাত্র পনেরো বছর বয়সে কালী সংগীত রচনা করে কবিত্বশক্তির পরিচয় দেন। পারিবারিক অনুকূল পরিবেশে এ সময় থেকেই তাঁর কবি প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। রাজশাহীতে অক্ষয়কুমার মৈত্রের বাড়িতে তিনি দ্বীজেন্দ্রলালের কণ্ঠে হাসির গান শুনে হাসির গান রচনায় অনুপ্রাণিত হন রজনীকান্ত। সেখানে তিনি স্বরচিত গান পরিবেশন করতেন। তখনকার ‘উৎসাহ’ নামক মাসিক পত্রিকায় তাঁর রচনা প্রকাশিত হতো। তিনি কবিতাও রচনা করতেন এবং ‘কান্তকবি’ নামে খ্যাত ছিলেন। তাঁর কবিতা ও গানের বিষয়বস্তু ছিল প্রধানত ভক্তি ও দেশপ্রেম। স্বদেশের প্রতি তাঁর প্রেম কোমল আর স্নিগ্ধ। আর তাঁর ভক্তিগীতি কেবল রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গেই তুলনীয়। তাঁর বিখ্যাত গান ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই, দিন দুখিনী মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই’ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল।
রজনীকান্ত রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীতি কবিতা ‘অমৃত ও সদ্ভাবকুসুম’ এবং সংগীত সংকলন ‘কল্যাণী’, ‘আনন্দময়ী’, ‘বিশ্রাম’, ‘অভয়া’, ‘মেষ দান’ ইত্যাদি। ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রজনীকান্ত সেন প্রয়াত হন। যুগ যুগ ধরে তাঁর গান বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে দেশকে প্রবলভাবে ভালোবাসার প্রেরণা জোগায়।