বান্দরবানে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে যৌথ বাহিনীর গোলাগুলি হয়েছে। এসময় যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত ২ জন কেএনএফ সদস্যের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে মর্গে নিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ছয়টায় লাশগুলো মর্গে নেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের রুমা–থানচি সড়কের শ্যারন পাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা পাল্টা গুলি চালালে দুপক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় থেমে থেমে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় যৌথ বাহিনীর গুলিতে কেএনএফের কয়েকজন অস্ত্রধারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। ঘটনাস্থলেই ২ জন কেএনএফ সদস্যের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন–শ্যারন পাড়ার বাসিন্দা লালনু বম এবং বেথানি পাড়া এলাকার থাংপুই বম। নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করেছেন শ্যারন পাড়া গ্রাম প্রধান কার্বারী তলুয়াং থাং বম।
এদিকে অভিযানে টিকতে না পেরে কেএনএফের অস্ত্রধারীরা জঙ্গলে পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে অভিযান শেষে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কেএনএফের ২ সদস্যের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে। উদ্ধারের পর লাশগুলো জিপে করে ময়না তদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জুয়েল ত্রিপুরা জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলিবিদ্ধ ২টি লাশ নিয়ে আসেন হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
গোলাগুলির কথা স্বীকার করলেও বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বিস্তারিত জানতে আইএসপিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
এদিকে সন্ত্রাস বিরোধী চলমান অভিযানে গত ১৯ মে রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ডেবাছড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিতে কেএনএফের ৩ জন অস্ত্রধারীর মৃত্যু হয়। গত ৭ মে রুমা উপজেলার দুর্গম দার্জিলিং পাড়ায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের জঙ্গলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের গোলাগুলিতে ২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছিল। গত ২২ এপ্রিল রুমা উপজেলার দুর্গম মুনলাই পাড়ায় সেনাবাহিনী সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সদস্যের মৃত্যু হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র–গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২ ও ৩ মে রুমা–থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট, ব্যাংকের অর্থ ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত নয়টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে থানচিতে ৪টি ও রুমায় ৫টি মামলায় ৮৭ জনকে কেএনএফের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ২৬ জন নারীও রয়েছে।