বিবিসির ১শ নারীর তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশি দুই নারীর মধ্যে একজন কক্সবাজারের রামুর মেয়ে রিমা সুলতানা রিমু। রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়েক বছর ধরে মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, শরণার্থী নারী ও শিশুদের শিক্ষার প্রসার, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, বয়সভিত্তিক সাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা, রেডিও ব্রডকাস্ট ও থিয়েটার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে শান্তি, নিরাপত্তা ও নারীর অগ্রগতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন তিনি। রিমা সুলতানা রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদার পাড়া এলাকার কৃষক আবদুর রহিম ও গৃহিণী খালেদা বেগমের মেয়ে। তিনি কঙবাজার সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসির ফলপ্রার্থী। ৪ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জানা গেছে, ২০১৯ সালে জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থায় দায়িত্ব পালনকালে জাতিসংঘের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের গার্লস অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হন রিমা। ওই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরের সুযোগ পান। রিমু কঙবাজারভিত্তিক ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিসের একজন সদস্য। তিনি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ উইমেন পিস বিল্ডার্সের সক্রিয় কর্মী হিসেবে সংঘাতসঙ্কুল দেশ থেকে আসা কিশোরীদের কল্যাণে কাজ করছেন। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য নারীদের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
দুই বছর আগে বেসরকারি সংস্থা ইয়ুথ অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইউসা) শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি রামু গ্লোবাল ইংলিশ লার্নিং সেন্টারে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় দক্ষ করার পাশাপাশি এ সংগঠনের বিভিন্ন মানবিক সেবা ও কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে তিনি ইউসার নির্বাহী সদস্য, গ্লোবাল ইংলিশ লার্নিং সেন্টারের সহ অফিস সম্পাদক এবং কিডস ক্লাবের কোর্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি লন্ডনভিত্তিক সংস্থা বিটিএমের ফরেন অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন।
জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শিউলী শর্মা বলেন, রিমুর এ সফলতায় জাগো নারী পরিবার গর্বিত। তিনি জানান, এ সংস্থার আওতায় জাতিসংঘের গার্লস অ্যাম্বাসেডর নির্বাচনের জন্য রামু ও উখিয়া উপজেলার ৩০ জন সেচ্ছাসেবী কিশোরী প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এর মধ্যে রিমা সুলতানা রিমু সর্বাধিক কর্মদক্ষতা, মেধার স্বাক্ষর রেখে জাতিসংঘের গার্লস অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হন। তিনি রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের শিক্ষার প্রসার, নারী অধিকার বাস্তবায়ন, সমাজ উন্নয়ন ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছেন, যার স্বীকৃতি আজ বিশ্ববাসী দেখছে।
ইউসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বিটিএমের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাহেদুল ইসলাম রায়হান বলেন, ২০১৮ সাল থেকে রিমা ইউসা ও গ্লোবাল ইংলিশ লার্নিং সেন্টারে কাজ করছেন। তার মেধা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা দেখে সংগঠনের পক্ষ থেকে উৎসাহ পেয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করার প্রেরণা পান। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মানবিক কর্মকাণ্ডে যেভাবে নিজেকে বিকশিত করেছেন তা বিরল। এমন উদ্যমী, প্রতিভাবান কিশোরীর সাফল্য এবং তার সাথে কাজ করতে পারা আমাদের জন্য আনন্দের। এ অগ্রযাত্রায় ভবিষ্যতেও আমরা তার পাশে থাকব।
ইউসা এবং গ্লোবাল ইংলিশ লার্নিং সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, রিমা সমাজের নারী ও শিশু বিষয়কে কেন্দ্র করে সর্বদা সৃজনশীল চিন্তা ও চেঞ্জমেকার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় তার নাম দেখে জিইএলসি পরিবার আনন্দিত।
রিমা সুলতানা রিমু আজাদীকে বলেন, মানুষের কল্যাণে মানুষকেই ভূমিকা রাখতে হবে। ভালো কাজে যুবসমাজ যেন হাল ছেড়ে না দেয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সব সময় নিজেদের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এ স্বীকৃতি ভবিষ্যতে সৃজনশীল ও মানবিক কাজে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে জানান তিনি।