যে ছবি কাঁদাল

ইসরায়েলি বর্বরতা, রেহাই পেল না আড়াই বছরের লায়লা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

ওর বয়স মাত্র আড়াই বছর। ফুটফুটে, দুই চোখে রাজ্যের কৌতূহল। নাম লায়লা। ইসরায়েলের বর্বরতা থেকে রেহাই পেল না সুন্দর শিশুটি। ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনার গুলিতে ফিলিস্তিনি শিশুটি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ওর পুরো নাম লায়লা মোহাম্মদ আয়মান আলখাতিব।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অভিযানের সময় লায়লার সন্তানসম্ভবা মাও আহত হয়েছেন। তিনি এক হাতে আঘাত পেয়েছেন, তবে তার আঘাত গুরুতর নয়। কবর দেওয়ার আগে লায়লাকে দেহ শেষবারে মতো জড়িয়ে ধরেন মা। চুমুও খেলেন। সেই ছবি কাঁদিয়েছে সবাইকে।

গাজাযুদ্ধে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে সেখানকার হাজার হাজার শিশুকে। গাজা যুদ্ধ বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে শিশুদের জন্য। ১৫ মাসের যুদ্ধে হাজার হাজার শিশু এতিম হয়েছে অথবা তাদের মাবাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজা যুদ্ধে প্রাণ গেছে ১৩ হাজার শিশুর। এছাড়া অপুষ্টিজনিত কারণে অন্তত ২৫ হাজার শিশুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ। এদিকে আল জাজিরার হিসাবে ফিলিস্তিনে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার। খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের মার্টিয়ার্স ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায় ইসরায়েলি সেনারা। সে সময় তারা লায়লার মাথায় গুলি করে। ইসরায়েলি সেনার গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে লায়লার ছোট্ট মাথা। হামলার পর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় প্যালেস্টাইনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন লায়লার অন্তঃসত্ত্বা মা। ঘটনার পর জেনিনে লায়লার ছবিসহ বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। বিশ্ব জুড়ে সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নেটাগরিকরা।

শিশু লায়লা নিহতের ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা লুকিয়ে আছেআগে থেকে পাওয়া এমন তথ্যের ভিত্তিতে একটি ভবন লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছুড়েছিলেন ইসরায়েলের সেনারা। আইডিএফ স্বীকার করেছে, গুলি চালানোর পর তারা বুঝতে পারে যে, গুলিটি ওই শিশুকে আঘাত করেছে। তাদের তাবি, বিষয়টি টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স ডেকে শিশুটি ও স্বল্প আঘাতপ্রাপ্ত তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।

আয়লান কুর্দি; লাল টিশার্ট আর নীল হাফ প্যান্ট পরা ফুটফুটে আয়লানের মুখ থুবড়ে বালির উপর পড়ে থাকার দৃশ্যের সামনে থমকে দাঁড়িয়েছিল সারা বিশ্ব। তার অপরাধ, নয় বছর আগের কোনো একদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সমুদ্র পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল তার পরিবার। তারপর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের এক সকালে তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে ভেসে এসেছিল বছর তিনেকের আয়লানের নিষ্প্রাণ দেহটা। তারপর ক’মাস এ নিয়ে কত শোরগোল, প্রতিবাদ। ক্রমে সব স্তিমিত হয়ে এসেছে। আয়লান, তামিমি, লায়লানয় বছরেও যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম এশিয়ায় থামেনি শিশুমৃত্যুর মিছিল। গত ১৫ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলিফ হত্যা মামলায় মেথরপট্টি থেকে আরো ১১ জন গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক এমপি নদভীর ৬ দিনের রিমান্ড