যে অভিযোগ উঠে এল গ্রাহকদের কথায়

বিটিআরসির গণশুনানি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে চট্টগ্রামে গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে অন্তত ১৫ জন গ্রাহক বিটিআরসি ও টেলিফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। যদিও অভিযোগের বিষয়বস্তু আগেই বিটিআরসিকে জানাতে হয়েছে গ্রাহকদের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে আয়োজক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাছাই করা (নির্ধারিত) অভিযোগগুলোই সরাসরি ও অনলাইন প্লাটফর্মে বলার সুযোগ পেয়েছেন গ্রাহকরা।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদার, ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এহসানুল করিব, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডু, স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল আউয়াল উদ্দীন আহমেদ, কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, শেখ রিয়াজ আহমেদসহ সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেন।

মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধেই বেশি অভিযোগ পাওয়া যায় শুনানিতে। ধীরগতির ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক সমস্যা, কল ড্রপ, অব্যবহৃত ডাটা যোগ না করা, রিচার্জ করলে গ্রাহকের অজান্তেই বিভিন্ন প্যাকেজ চালুসহ আরো নানা অভিযোগ উঠে আসে গ্রাহকদের কথায়। এসব অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জবাব দেন।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান জানায়, গণশুনানিতে অংশ নিতে সবমিলিয়ে ৮৪৮ জন অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সশরীরে ১৮২ জন, অনলাইনে ৯৪ জন এবং অন্যান্য মাধ্যমে ১৭ জন অংশ নেন। বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অক্টোবর ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে মোবাইল সিম গ্রাহক সংখ্যা ১৮ কোটি ১৬ লাখ। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৬২ লাখ।

শুনানিতে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, গণশুনানিতে যেসব অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে সহায়ক হয়। গণশুনানিতে অনেক অজানা বিষয় উঠে আসে, যা গ্রাহক জানতে পারে। টেলিযোগাযোগ সেবা কিভাবে বাড়ানো যায় সেটি নিয়ে বিটিআরসি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, আমরা শুনানির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগগুলো শুনছি। কিছুদিন আগে আমরা রাঙামাটিতে শুনানি করেছি। তার আগে আরও কয়েকটি জেলায় শুনানি করেছি। এখন চট্টগ্রামে হচ্ছে। শুনানিতে উঠে আসা অভিযোগগুলোর বিষয়ে আমরা সমাধানের চেষ্টা করবো।

কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিটি গণশুনানি প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ায়। গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতে আর কতটুকু উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে বিটিআরসি কাজ করবে। গণশুনানি সংক্রান্ত উপস্থাপনা করেন কমিশনের সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।

আব্দুল্লাহ আল কায়সার নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, ইনডোরে আমরা নেটওয়ার্ক খুব বেশি পাই না। আমাদের অফিস জিইসিতে। অফিস ভবনের নিচতলায় ফোরজি নেটওয়ার্ক থাকে না। আমার বাসা ফয়’স লেক এলাকায়। সেখানেও এক দাগের বেশি গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্ক পাই না। এ কারণে আমার মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। রবির ক্ষেত্রে যেটি হয়, সন্ধ্যার সময় শহরের অধিকাংশ স্থানে রবির নেট অনেক দুর্বল থাকে। ডাটা ব্যবহার করা যায় না।

গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেট গতি বাড়ানোর জন্য গত ১ বছরে বিটিআরসি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে জানিয়ে সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, ইন্টারনেট গতি যাচাই করতে ডিভাইস কেনা হয়েছে। কল ড্রপ নিরসনে কলড্রপ ফেরতের জন্য এ বছর নতুন নির্দেশনা চালু এবং প্রতিটা কলড্রপে যা খরচ হয় তার তিনগুণ ফেরত দেওয়ার বিধান চালু করা হয়েছে। গ্রাহক নিজেই *১২১*১২# ডায়াল করে কলড্রপ যাচাই করতে পারবেন। এছাড়া গ্রাহকদের জন্য আনলিমিটেড ডাটা প্যাক চালু এবং ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড তথা অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী একই প্যাকেজে ব্যবহারের জন্য ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা চালু করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

দুর্বল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট গতির বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে. জে. মো. এহসানুল কবীর বলেন, গত আগস্টে আমরা সব অপারেটরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টাওয়ার পরিদর্শন করেছি। চট্টগ্রামেও পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনে অপারেটরগুলোর বেশকিছু টাওয়ারের নেটওয়ার্ক দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব টাওয়ারে নেটওয়ার্ক গতি বাড়াতে অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুনানিতে মেরিটাইম সেবায় নিয়োজিত নৌযানের জন্য কল সাইন ও রেডিও কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট লাইসেন্স নির্ধারিত সময়ে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবিদ হোসাইন। তিনি অভিযোগ করেন, কল সাইন ও রেডিও কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সকলের জন্য সহজ নয়। সিটিজেন চার্টারে ১০ দিনের সময়সীমা উল্লেখ থাকলেও আবেদনের অনির্দিষ্ট সময়ের পরও ডিমান্ড নোট পাওয়া যায় না।

শেখ আবিদ হোসাইন আরও অভিযোগ করেন, ডিমান্ড নোটের টাকা প্রদানের পর লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা অনুসরণ করা হয় না। অবিশ্বাস্য মনে হলেও অনলাইন আবেদন করার ৫ থেকে ১০ দিন পর সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন জমা পড়ে।

এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, কল সাইন ও রেডিও কমিউনিকেশন লাইসেন্স’র ক্ষেত্রে ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এসব সংস্থা থেকে ক্লিয়ারেন্স (নিরাপত্তা ছাড়পত্র) পাই না ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও আপনাদের কাছ থেকে যে অভিযোগ পেয়েছি। সেটি আমরা গ্রহণ করছি। কল সাইন ও রেডিও কমিউনিকেশন লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া আরও কিভাবে সহজতর করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করার কথা বলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন রোনালদো?
পরবর্তী নিবন্ধনয়াপল্টনের ঘটনার জন্য বিএনপিই দায়ী : তথ্যমন্ত্রী