একদিন ভোরে কয়েকজন ফিসফিস করে বলছিলেন ‘শেষ ‘করে দিয়েছি। শুনে মা দৌড়ে এসে বললেন কি হয়েছে? কি হয়েছে? উনারা চুপ। কই কিছুই হয়নি বৌদি। এই যে তোমরা বললে শেষ করে দিয়েছি। না না আপনি ভুল শুনেছেন। আমরা ওরকম কিছু বলেনি। ঘণ্টা কয়েক পরে কর্ণফুলীতে ভেসে উঠলো একটা লাশ। লাম্বুরহাট(রাউজান) এলাকার এক বিখ্যাত রাজাকারের লাশ। আমার মা সেদিন ভুল শোনেননি। তাঁদের ইশারার ভাষা বুঝতেন। উনারা ছিলেন সব মা’র পরিচিতজন। বলছিলাম ১৯৭১ সালের কোন একদিনের কথা। উল্লেখিত কয়েকজনের একজন হলেন আমার ছোট বাবা (ছোট কাকা) বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন রনজন বড়ুয়া বিএসসি। অবস্থানগত কারণ এবং আমার কাকা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে আমাদের রাউজান বাগোয়ানের বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। উত্তর চট্টগ্রামের গেরিলা কমান্ডার ক্যাপ্টেন করিম শহীদ হওয়ার পূর্ব রাতে অবস্থান ছিল আমাদের বাড়িতে। একজন সাবেক মন্ত্রী (বীর মুক্তিযোদ্ধা) প্রায় আসতেন আমাদের বাড়িতে। মা গত হয়েছেন ১৫ বছর আগে। কাকা আরো অনেক আগে। তখন বয়স কমছিল বলে সে অমূল্য ইতিহাসগুলোর গুরুত্ব তেমন বুঝিনি। এখন বুঝছি কী সুযোগ হারিয়েছি। এখনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকা যাচাই-বাছাই হয়। অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে। আমার কাকাসহ এলাকার বেশ কয়েকজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাতে নেই। অথচ…। আমার কাকিমা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বেশ কয়েক জায়গায় ধর্না দিয়েছেন। বীরের স্বীকৃতিটুকুর জন্য। কেউ কথা রাখেনি।