যুগ্ম সম্পাদকে দুই পুরানোর সাথে এক নতুনের লড়াই কোষাধ্যক্ষ পদে লড়াইটা যেন একেবারে মুখোমুখি

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

বেশ জমে উঠেছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা বহু প্রত্যাশিত নির্বাচন। আর দুদিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে ব্যালট যুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রতিটা পদেই চলছে দারুণ লড়াই। যেমন যুগ্ম সম্পাদক পদে লড়াইটা হবে দু পুরানোর সাথে এক নতুনের। বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সাথে লড়াইটা তিনবারের নির্বাহী সদস্য অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন এবং নবাগত সরোয়ার আলম চৌধুরী মনির। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহি কমিটিতে স্বপন এবং ্‌আমিন বেশ পুরানো। সে হিসেবে ক্লাব কর্মকর্তা হিসেবে পুরানো হলেও জেলা ক্রীড়া সংস্থায় প্রথম নির্বাচন করছেন মনি। তাই নতুন আর পুরাতন মিলে লড়াইটা বেশ জমে উঠেছে। অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন এই শহরে অনেক সংস্থার সাথে জড়িত। কোনটির সভাপতি, কোনটির সাধারন সম্পাদক আবার কোনটির পরিচালক। জেলা ক্রীড়া সংস্থায়ও তিনি এসেছেন সেই ২০১১ সালে। সাতকানিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে এসেই নির্র্বাচিত হয়েছিলেন নির্বাহি সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। পরের মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি এসেছিলেন লিটল ব্রাদার্স ক্লাবের হয়ে। আর সে ক্লাবের হয়ে দুই মেয়াদে ছিলেন নির্বাহী সদস্য। হ্যাটট্রিক করার পর এবার তার গন্তব্য যুগ্ম সম্পাদক। তবে এবারে তিনি এসেছেন রাইফেল ক্লাবের প্রতিনিধি হয়ে। তিনি আবার সে ক্লাবের কোষাধ্যক্ষও। ১২ বছরের নির্বাহি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি জেলার ভলিবলকে জাগিয়ে তুলেছেন। ছিলেন সংস্থার ভলিবল সম্পাদকও। একাধিক জাতীয় ভলিবল টুর্নামেন্টও আয়োজন করেছেন চট্টগ্রামে। জেলা দলকে নিয়ে গেছেন অনেক উচ্চতায়। এবার যুগ্ম সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে এসে আরো গুরু দায়িত্ব পালন করতে চান এই অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠক। নানা পরিকল্পনা সেট করে ফেলেছেন এরই মধ্যে। আর সেগুলো বাস্তবায়নে জিততে চান যুগ্ম সম্পাদক পদে।

আমিনুল ইসলামের প্রায় চার দশকের কাছাকাছি কেটে গেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। এরই মধ্যে তিনি পালন করেছেন অনেক গুরু দায়িত্ব। সেই ১৯৮৬ সালে বাকলিয়া একাদশ ক্লাবটি এফিলিয়েশন পাওয়ার পর থেকে সে ক্লাবের প্রতিনিধি হয়ে আসেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। ১৯৯২ সালে আসেন প্রথম নির্বাহি কমিটিতে সদস্য হিসেবে। তবে সেটি ছিল সমঝোতার কমিটি। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে তিন মেয়াদে পালন করেন নির্বাহী সদস্যের দায়িত্ব। ২০০৭ সাল থেকে ১০১০ সাল পর্যন্ত পালন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব। আবার ফিরেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ২০১১ সালের নির্বাচনে। সেবার নির্বাচিত হন যুগ্ম সম্পাদক। এরপর আরো দুই মেয়াদে যুগ্ম সম্পাদক হয়ে করেছেন হ্যাটট্রিক। এবারেও সে পদেই নির্বাচন করছেন। ব্যাটমিন্টন ফেডারেশনে নির্বাহি সদস্য ছিলেন একাধিক মেয়াদে। দুই মেয়াদে ছিলেন সহ সভাপতি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যাডমিন্টন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। টানা চার মেয়াদে তাই যুগ্ম সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন আমিনুল ইসলাম।

এই নির্বাচনে একেবারে নতুন সরোয়ার আলম চৌধুরী মনি। যদিও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মোটেও নতুন নন। সেই ২০০২ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র (লাল) এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ক্রীড়াঙ্গনের সাথে তার যোগাযোগটা একেবারেই নিয়মিত। তবে তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থায় কাউন্সিলর হয়ে আসেন ২০২০ সালে। দায়িত্ব নিয়েই অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে জাগিয়ে তোলেন বেশ কয়েকজন তরুনকে সঙ্গী করে। এখন এই ক্লাবটি চট্টগ্রামের ফুটবল এবং ক্রিকেট সহ বিভিন্ন ইভেন্টে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বী। তারুণ্যের প্রতিনিধি হয়ে তিনি এবারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। দুই অভিজ্ঞের সাথে তাই লড়তে হবে তাকে কঠিন লড়াইয়ে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আরো বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উদ্যমী তরুণকে নিয়ে এসেছেন খেলাধুলায়। নিজের ক্লাবের পাশাপাশি তাদেরকে জেলা ক্রীড়া সংস্থায়ও কাজে লাগাতে চান মনি। আর সে লক্ষ্যেই তিনি যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বলে জানিয়েছেন। কারন তার বিশ্বাস এগিয়ে যেতে হলে প্রথমে হাত বাড়াতে হবে তরুণদের। আর অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা থাকবে তাদের চলার পথের প্রধান উপকরন। অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে আসা এই তিনজনের মধ্য থেকে কোন দুজন বেরিয়ে আসেন সেটা জানতে অপেক্ষা ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

দেশের সবচাইতে ধনী ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ পদটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদে সরাসরি লড়াই করছেন ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রীড়া সংগঠক বনে যাওয়া দুজন। তারা হলেন টানা চারবার কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা শাহাবুদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং একাধিকবার নির্বাহী সদস্যের দায়িত্ব পালন করা আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল। দুজন অবশ্য আট বছর আগে এই পদে একবার মুখোমুখি হয়েছিল। সে লড়াইয়ে জয়টা ছিল শাহাবুদ্দিন জাহাঙ্গীরেরই। আট বছর পর আবার দুজন মুখোমুখি। আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল খেলেছেন ফুটবল, ভলিবল এবং হ্যান্ডবল। ফুটবলে আগ্রাবাদ নওজোয়ান, রাইজিং স্টার, বিসিআইসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলেছেন। ভলিবল এবং হ্যান্ডবল খেলেছেন জেলা দলের হয়ে। ২০০৩ সালে প্রথমবার প্রতিনিধি হয়ে এসে নির্বাচিত হন নির্বাহি সদস্য পদে। এরপর এই পদে আরো দুইবার নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৭ সালের এডহক কমিটিতে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহি সদস্য, বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সহ সভাপতি, চুকবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার লড়ছেন কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী এই পদে চারবার নির্বাচিত। তাই লড়াইটা যে তাকে কঠিন ভাবেই করতে হবে সেটা তিনি বেশ ভালই জানেন। তবে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য শুভ কামনা জানিয়ে রাখলেন।

চট্টগ্রামের ক্রিকেটে একসাথে দুইভাই ক্রিকেট খেলেছেন এমন জুটির মধ্যে অন্যতম শাহাবুদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর এবং সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর। দুইভাই একসাথে বেশ দাপটের সাথে ক্রিকেট খেলেছেন নিজেদের পাড়ার ক্লাব শতদল ক্লাব সহ বিভিন্ন ক্লাবে। খেলা ছেড়ে নিজেদের ক্লাবের হালও ধরেছেন জাহাঙ্গীর। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এসেছেন সে ক্লাবেরই প্রতিনিধি হয়ে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে হয়েছিলেন নির্বাহী সদস্য। এরপর থেকে কেবল একটি পদেই নির্বাচন করেছেন তিনি। আর সেটি হলো কোষাধ্যক্ষ। এই পদে এরই মধ্যে হ্যাটট্রিক করে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এটি একটি রেকর্ডও বটে। যে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন শাহাবুদ্দিন জাহাঙ্গীর সে ক্লাবের দায়িত্ব নিয়ে দুটি ক্লাবকে একসাথে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ এই পথ চলায় কোষাধ্যক্ষের মত কঠিন দায়িত্বটা তিনি পালন করেছেন বেশ দক্ষতার সাথে। আরো একবার এই পদে প্রার্থী হয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে। সংস্থার স্বার্থ সমুন্নত রাখার প্রত্যয় নিয়ে ছুটে চলা শাহাবুদ্দিন জাহাঙ্গীর জয়ের ব্যাপারেও বেশ আশাবাদী।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার এবারের নির্বাচনটা একটি আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী এবার নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। তাই কোষাধ্যক্ষের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিশ্চয়ই সঠিক মানুষটিকে বেছে নেবে কাউন্সিলররা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাকিবের নিউজিল্যান্ড যাওয়াও অনিশ্চিত
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে ৩৬.৫৬ লাখ শেয়ার হাতবদল