শ্রমবাজার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল গেলেও এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স আসছে বেশি। রেমিটেন্স হিসেবে আসা এ অর্থ আগে পাচার হয়েছিল বলে সিপিডির ধারণা। গতকাল সিপিডির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২–২৩ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীমূলক পর্যালোচনা’ জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ধারণা দেওয়া হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিটেন্স আকারে আসছে। তারা রেমিটেন্সে দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও নিচ্ছে। এই প্রণোদনা নিতে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স আনছে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। ৭ শতাংশ কর দিয়ে এই অর্থ ফেরত আনার সুযোগও দিয়েছে সরকার। তবে তাতে সাড়া মেলেনি। এদিকে বৈধ পথে রেমিটেন্স উৎসাহিত করতে কয়েক বছর ধরেই প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এখন কেউ ১০০ টাকা রেমিটেন্স পাঠালে তা দেশে যিনি গ্রহণ করেন, তিনি পান ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। এই সুযোগ অর্থ পাচারকারীরা নিচ্ছে বলে অনেকের সন্দেহ। রেমিটেন্স কোথা থেকে আসছে তা এখনই দেখা দরকার বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। এদিকে নীতি–নির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাতে আলাদা আইন কিন্তু রয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে প্রশাসনিক কঠিন উদ্যোগ নিতে হবে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২১ লাখ ব্যক্তি দেশের বাইরে গেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এর মধ্যে ১১ লাখের বেশি সৌদি আরবে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্স কমছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়ছে। এ বিষয়ে খুব ভালোভাবে গবেষণা ও অনুসন্ধান হওয়া দরকার। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করব, এর কারণ বের করতে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র একটি ঘটনায় ২০ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা গেছে। কয়েকটি দেশের সঙ্গে মাত্র তথ্য আদান প্রদানের জন্য সমঝোতা চুক্তি করেছে বিএফআইইউ, যা মন্দের ভালো।
অর্থ পাচার বিষয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলেজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটির পক্ষে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের প্রধান হিসেবে কাজ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংস্থাগুলো সরকারের অধীনে থাকলে তো তারা স্বাধীন হয়ে কাজ করতে পারে না। তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। এখানে সংস্কার দরকার।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সালে দেশে স্বর্ণ এসেছিল ৫ টন। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫৪ টন, যা আমাদের বার্ষিক চাহিদা ২০ টনের বেশি। এ স্বর্ণ দেশ থেকে পাচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মোস্তাফিজুরের ধারণা। তিনি বলেন, রেমিটেন্স এখন স্বর্ণ আকারেও আসছে। এ পরিমাণ রেমিটেন্স ব্যাংকে আসলে রিজার্ভ বাড়ত। হুন্ডি–হাওলা বন্ধ করা গেলে রেমিটেন্স বেড়ে তা সংকটে থাকা রিজার্ভকে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো।