যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শাহরিয়ার

| বুধবার , ২২ মার্চ, ২০২৩ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেটাকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশ হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি রাষ্ট্র এবং আমাদের যাত্রাপথ যে কতটা কণ্টকাকীর্ণ ছিল বা এখনও আছে, সেটা যে কোনো রাষ্ট্র নিশ্চয় বোঝেন এবং জানেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর যেটুকু ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই আছে। এটা ডিগ্রি অব অ্যাপ্লিকেশন বা অন্য কিছু নিয়ে একটা বন্ধু রাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ করার বা সংশয় প্রকাশ করার বা প্রশ্ন উত্থাপন করার কোনো নৈতিক অধিকারই নেই। খবর বিডিনিউজের।

বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনের বলা হয়, বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী যে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে। যে ভোটে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, ২০১৮ সালের সেই সংসদ নির্বাচনকেও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে করছে না দেশটি।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হয় বলে মনে করেন শাহরিয়ার। এ বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, সেখানে প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডারে অনেক কাজ হতে পারে। এটা তাদের সংবিধানের অংশ এবং একটা দেশের সরকার চলে ও পরিচালিত হয়, তাহলে কি আমরা বলব, সেই রাষ্ট্রপতি একমাত্র ক্ষমতাধর ব্যক্তি? তা তো নয়। আমাদের দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে কীভাবে আইন প্রণয়ন হয়, আপনারা সেটা দেখেছেন, দেখছেন। সেখানে এভাবে ঢালাওভাবে একটা পজিশানকে, সাংবিধানিক অফিসকে আন্ডারমাইন্ড করার একটা প্রবণতা আমরা দেখেছি, যেটা শুধু দুঃখজনক নয়, খুবই দুঃখজনক।

বাংলাদেশের বিষয়ে এবারের প্রতিবেদনে বরাবরের মতো কিছু ‘দুর্বলতা’ রয়ে গেছে বলেও মনে করছেন তিনি। তার মতে, এর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেদন তৈরির আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া, অধিকারএর মতো অনিবন্ধিত সংগঠনের তথ্য ব্যবহার এবং অনেক ভুল তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

বাকস্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে উন্মুক্ত উৎস থেকে তথ্যগুলো নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ববিরোধী’ অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে বেশ কিছু এনজিও, আইএনজিও বা সিএসওর রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম আছে ‘অধিকার’। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই যে, অধিকারকে বর্তমানে বাংলাদেশে অপারেট করার তাদের কাছে ভ্যালিড ডকুমেন্টস বা লাইসেন্স নাই। যেসব সংগঠন রেজিস্টার্ড না, সেসব সংগঠনকে আমলে নিয়ে সেটার কাজটাও কিন্তু একটা বেআইনি বা একটা নর্মসের বাইরে পড়ে। আমরা অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে, যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রও যেন এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকে এবং আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, আমরা যাকে যেভাবে রিকগনাইজ করেছি সেটা আমলে নিয়ে যেন তারা তাদের সামনের দিনের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তিগুলো তুলে ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই রকম শর্টকামিংস যদি অব্যাহতভাবে থাকে এই রিপোর্টগুলোর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়। তো, আমরা এই বিষয়গুলো আরেকটু বিশ্লেষণ করে দেখব, এখানে আমলে নেওয়ার আদৌ কোনো বিষয় আছে কিনা।

২০২১ ও ২০২২ সালের প্রতিবেদনের মধ্যে গুণগত ও কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন নেই বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনায় সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, রিপোর্টটা যেহেতু বড়, সময় লাগবে স্টাডি করতে এবং ২০২১ এর সাথে ২২এর তুলনা, ঠিক আছে কিনা বা বর্তমানের। এবং আমরা ইতোমধ্যে কিছু ভুল পেয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাস্কর শামীম সিকদার আর নেই
পরবর্তী নিবন্ধপ্রকল্পের গাড়ি প্রগতি থেকে কিনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ