যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারটাকে অনেকেই দুর্ঘটনা মনে করেছিল। বাংলাদেশ দলেরও সে হারের স্মৃতি ভুলে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু কিসের কি? নিজেদের সামর্থটাই যেন দেখাল বাংলাদেশ আরেকবার। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে জিম্বাবুয়েকে ঘরের মাঠে ডেকে আনা হয়েছিল।
তাদের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও ব্যাটাররা ছিল একেবারে ব্যর্থ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরো ভালো প্রস্তুতি নিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামে। কিন্তু কে জানতো এই সিরিজটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের মর্যাদার চাদর ধরে টান মারবে। বিশ্ব ক্রিকেটে নবাগত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যেন টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট শেখাল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে স্বল্প রানে বেঁধে ফেলে নিজেরা সেটা টপকে গেছে আনায়াসেই। দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেরা স্বল্প রান করেও সেটা টপকাতে দেয়নি বাংলাদেশকে। ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচাইতে বড় লজ্জা গুলোর তালিকা যদি করতে হয় তাহলে এই সিরিজটি সবচাইতে বড় লজ্জা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। টানা দুই ম্যাচে জিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সিরিজ জয়কে কোন অঘটন বলা যাবে না। বলতে হবে বাংলাদেশের সামর্থ এটুকুই। বাংলাদেশ যেন উপরে ফিটফাট আর ভেতরে সদরঘাট।
গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নিল যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এই ফলটা বাংলাদেশের পক্ষেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দল গঠনে ব্যর্থতা, ব্যক্তিগত পছন্দ, দলে ফর্মহীন ক্রিকেটারের সমাবেশ, অপরিপক্ক অধিনায়কত্ব। সব মিলিয়ে ফল যাই হওয়ার তাই হয়েছে। এই ফলই পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের। কি ব্যাটে আর কি বলে, এমনকি ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের চাইতে অনেক এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। খেলা দেখে কে বলবে এই দলটার নাম যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপের আগে এমন প্রস্তুতি কি ফল বয়ে আনবে সেটা বোধহয় বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। প্রথম ম্যাচের লজ্জার সাথে দ্বিতীয় ম্যাচে আরো বড় লজ্জার শিকার হতে হলো বাংলাদেশকে সিরিজ হারিয়ে। এখন বাংলাদেশকে হোয়াইট ওয়াশ করার স্বপ্ন দেখতেই পারে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেটা হলে অবাক হওয়াটা হবে চরম বোকামি।
টসে জিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ। স্বাগতিক দুই ওপেনার টেইলর এবং প্যাটেল মিলে ৪৪ রান তুলে নেন। ২৮ বলে ৩১ রান করা টেইলরকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন রিশাদ হোসেন। পরের বলে আন্দ্রেস গওসকেও ফেরান রিশাদ। দ্বিতীয় উইকেটে প্যাটেল এবং জোন্স মিলে যোগ করেন আরো ৬০ রান। ৩৪ বলে ৩৫ রান করা জোন্সকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন মোস্তাফিজ। এরপর শরীফুলের জোড়া আঘাত। তার প্রথম শিকার কোরি এন্ডারসন। তিন বল পর মোনাক প্যাটেলকেও ফেরান শরীফুল। ফিরে আসার আগে এই ওপেনার করেন ৩৮ বলে ৪২ রান। এন্ডারসন করেন ১১ রান। যুক্তরাষ্ট্রের পরের ব্যাটাররা আর সুবিধা করতে পারেনি। ফলে ১৪৪ রানে থামে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন শরীফুল, রিশাদ এবং মোস্তাফিজ।
জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা একেবারেই বিবর্ণ। লিটনকে বাদ দিয়ে তানজিদ তামিমকে ফেরানো হয় একাদশে। সৌম্য সরকারকে সঙ্গী করে ইনিংস শুরু করতে নামেন তামিম। কিন্তু যথারীতি ব্যর্থ সৌম্য। আগের ম্যাচে ১৩ বলে ২০ রান করলেও এই ম্যাচে রানের খাতা খুলতে পারেননি। তামিম এবং শান্ত মিলে ২৯ রানের বেশি যোগ করতে পারলেন না। ইনফর্ম তামিম ফিরেছেন ১৫ বলে ১৯ রান করে। শান্ত এবং হৃদয় মিলে ৪৮ রানের জুৃটি গড়ে বেশ ভালই এগুচ্ছিলেন। কিন্তু দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারলেন না। আগের ম্যাচে ব্যর্থ হলেও এই ম্যাচে ৩৪ বলে ৩৬ রান করেন শান্ত। দুই ওভার পর ফিরেন হৃদয়। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২৫ রান। সাকিবের ব্যাটে যখন ম্যাচ জয়ের দিকে এগুচ্ছিল বাংলাদেশ তখন দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিব ৩০ রান করে ফিরলেও মাহমুদউল্লাহ এবং জাকের আলি ফিরেছেন ৩ এবং ৪ রান করে। সে চাপ থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। সাকিব আউট হওয়ার পরপরই হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ফলে ১৩৮ রানে অল আউট হয়ে যায়। ফলে ৬ রানে হেরে সিরিজও হারায় বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ৩টি উইকেট নিয়েছেন আলি খান। ২টি করে নিয়েছেন সৌরভ এবং সাদলে।