যা বলছেন সরকার সংশ্লিষ্ট লোকজন

সিআরবিতে হাসপাতাল

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৫ জুলাই, ২০২১ at ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজনদের প্রতিবাদ চলার মধ্যেই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এমপি মন্ত্রীসহ সরকার সংশ্লিষ্ট লোকজন। তারা বলছেন পরিবেশ ধ্বংস করে কিছু করা হবে না। তবে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন তিনি সে ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত জানাবেন।

হাসপাতাল দরকার, তবে তা অন্য কোথাও হতেপারে : ফজলে করিম
‘প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবান্ধব তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন’
আজাদী প্রতিবেদন
সিআরবিতে গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে চট্টগ্রামে সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে নানান শ্রেণী পেশার মানুষের লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ-মানববন্ধন চলছে। এই সময়ে হাসপাতালের বিষয় নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছেন। যেটি বেশ আলোচিত হয়েছে। ভিডিও বার্তায় এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি বলেছেন, সিআরবিতে হাসপাতাল নিয়ে একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, প্রথমত সবকিছু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত, এটা মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি হাসপাতাল আমাদের দরকার এবং এটা চট্টগ্রামের মানুষের দাবি, আমাদের চিকিৎসার জন্য। সব মানুষ ঢাকায় আসবে এটা হতে পারে না। চট্টগ্রামের মানুষের সেবার জন্য আধুনিক হাসপাতাল দরকার। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে গাছ কেটে এখানে হাসপাতাল হবে। সেই বিষয়টা দেখতে হবে। এই বিষয়টা আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ-আলোচনার দরকার আছে। সিআরবি অত্যন্ত একটি সুন্দর জায়গা। এটাকে সব সময় আমি মিনি সিঙ্গাপুরের আদলে দেখে থাকি। আমার মনে হয় নিঃশ্বাস ফেলার একটি জায়গা। সিআরবিতে তাপমাত্রাও অনেক কম। বাইরে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও সিআরবিতে ২/৩ ডিগ্রি কম থাকে। সকল বিষয় নিয়ে আমি নিজেও খুব চিন্তিত। যেহেতু আমি একই মন্ত্রণালয়ের (রেলওয়ে) সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি অনেক দিন। এই বিষয়টা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে হাসপাতালও দরকার। হাসপাতাল অন্য কোথাও হতে পারে। রেলের আরো জায়গা আছে। সড়ক ও জনপথের জায়গা আছে। এখানে প্রায় ৬ একর জায়গা দেয়া হয়েছে। ৬ একর জায়গা তো অনেক জায়গা। আর একটা বিষয় আমি জানতে পারলাম এটা বানাতে নাকি ১২ বছর লাগবে। প্রায় ১ যুগ। ১ যুগ আমিও তো বাঁচবো না। সুতরাং মানুষের তো খুব সহসা সুফল পেতে হবে। আজকাল মডার্ন টেকনোলজিতে খুব দ্রুত কাজ করা যেতে পারে। আমাদের চট্টগ্রামে এভারকেয়ার হাসপাতালও তো হয়েছে। এটা তো দৃশ্যমান। এটাতেও মানুষ সেবা পাবে।
আমরা চট্টগ্রামবাসী যারা আছি দলমত-নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ সবাই উদগ্রীব। আমি মনে করি এটার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। যেহেতু এটা আমার মন্ত্রণালয় আমি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও কথা বলবো।
তিনি বলেন, আমি হাসপাতালের পক্ষে। তবে কোথায় হবে, কিভাবে হবে-সেটা নিয়ে আলোচনার দরকার। কোন গাছ কাটা যাবে না। আমি নিজে প্রচুর গাছ লাগায়। আমি সারা জীবনে হিসেব করলে ১০ লক্ষ গাছের চারা লাগিয়েছি। গাছের পক্ষে আমি। গাছ আমাদের বন্ধু। গাছ না থাকলে আমরাও বাঁচবোনা। সুতরাং আমার একটি গাছও কাটুক এটার পক্ষে আমি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবান্ধব। তিনি এটা নিয়ে চিন্তা করবেন। উনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই ফাইনাল।

চট্টগ্রামের স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না : নওফেল
আজাদী প্রতিবেদন
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘পরিবেশ ধ্বংস করে কিছু করা হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখুন। চট্টগ্রামের স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না।
তিনি বলেন, সিআরবিতে শতবর্ষী বৃক্ষ নিধন করার সুযোগ নেই। এটি করা হবে না। পরিবেশের ক্ষতি করে কোন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে না। রেলওয়ের সাথে যৌথভাবে বেসরকারি একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপারে যেসব কথা বার্তা বলা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আরো আলাপ আলোচনা হবে। চট্টগ্রামের মানুষের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে সরকার কোন ধরনের আপোষ করবে না।
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সরকার পরিবেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ। বৃক্ষ রক্ষার ব্যাপারেও সরকারের আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার কোন ঘাটতি নেই। এমন জনবান্ধব এবং পরিবেশ বান্ধব সরকারের সময়কালে শতবর্ষী বৃক্ষ কোনভাবেই নিধন হবে না। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই কল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত নেবেন ।
স্থানীয় এমপি হিসেবে তাঁর ভূমিকা কি প্রশ্ন করা হলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা অবশ্যই একটি হাসপাতাল চাই। আমাদের হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে। চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারিখাতে ভালো হাসপাতালের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের জন্য শতবর্ষী বৃক্ষ নিধন মেনে নেয়া যায় না। পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে হাসপাতাল বানানো হবে না। পরিবেশ রক্ষা করে কিভাবে হাসপাতাল বানানো যায়, কিভাবে হাসপাতালটিকে সাধারণ মানুষের কাজে লাগানো যায় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণ যৌক্তিক নয় : মেয়র
বিকল্প জায়গায় করার প্রস্তাব
আজাদী প্রতিবেদন
জনমত উপেক্ষা করে হাসপাতাল নির্মাণের নামে সিআরবি’র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করা উচিত হবে না বলে মনে করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। একইসঙ্গে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়তলীসহ বিকল্প জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব করেন তিনি। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য দরকার হলে মোহরায় সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দিতেও আগ্রহ দেখান মেয়র।
তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, শহরের ভেতর বড় কোনো পার্ক নেই। সিআরবিতে মানুষ ভ্রমণ করে, সেখানে যায় স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলার জন্য। বিশুদ্ধ বাতাসে শান্তির পরশ মেলে সেখানে। সিআরবি’র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্য জায়গার চেয়ে আলাদা। এ সৌন্দর্য নষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণকে যৌক্তিক মনে করি না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্যই তো এ হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। অথচ মানুষের মনোভাবের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। সেটা ঠিক হবে না। জনমতকে উপেক্ষা করে কোনো কাজ করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, রেলওয়ের তো জায়গার অভাব নেই। পাহাড়তলীতেও অনেক জায়গা আছে। সেখানেও তো চাইলে হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু সিআরবিতে করতে হবে কেন?
তিনি বলেন, মোহরায় সিটি কর্পোরেশনের জায়গা আছে। তারা প্রয়োজন মনে করলে সেখানে করতে পারে। আমরা দুই-আড়াই একর জায়গা দিতে রাজি আছি। মোহরায় হাসপাতাল হলে নগরের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্যও উপকার হবে। এরপরও সিআরবি’র সৌন্দর্য নষ্ট করার পক্ষপাতি না আমি। রেলমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও বিষয়টি উপানুষ্ঠনিক পত্র দিয়ে জানাবো। অনুরোধ করবো সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য।
শিরীষতলায় হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে না বলে রেলওয়ের বক্তব্য এসেছে সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ধরেন কেউ রাজমহল বানাল। সেই রাজমহলের আশপাশে যদি অন্য কেউ ভবন নির্মাণ করে তাহলে তো রাজমহলের সৌন্দর্য দেখা যাবে না। সিআরবি’র বিষয়টিও তেমন। শিরীষতলায় নির্মাণ করবে না সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। কিন্তু যে জায়গা বাছাই করা হয়েছে সেখানে নির্মাণ করা হলেও পুরো এলাকার পরিবেশ কি ঠিক থাকবে? থাকবে না।

হাসপাতালের জন্য সরকার পরিবেশের ক্ষতি করবে না : সিডিএ চেয়ারম্যান
আজাদী প্রতিবেদন
বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের কোন প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন ধরনের এনওসি বা অনুমোদন নেয় না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের(সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ। তিনি বলেন, সবার উচিত আইন মেনে চলা, পরিবেশ রক্ষা করা। শতবর্ষী বৃক্ষ নিধনের কোন সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশ্চয় পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করবে না। সিআরবি চট্টগ্রাম মহানগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। ওখানে একটি হাসপাতাল আগে থেকেই রয়েছে। এখন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় কি ধরনের হাসপাতাল, ঠিক কোথায় গড়ে তোলা হবে তা নিশ্চয় সরকার দেখবে। জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন পদক্ষেপ সরকার কোনদিন নেয় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে হাসপাতালের অভাব রয়েছে। তাই হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই হাসপাতালের জন্য সরকার নিশ্চয় পরিবেশের ক্ষতি করবে না।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রকল্পটির এনওসি দেয়া বা প্ল্যান পাশ করা না করার সাথে সিডিএ’র কোন সম্পর্ক নেই। সিডিএ এই প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত নয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সরকার নিশ্চয় ভালো কিছু করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোরবানির হাটে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধদুই মা, ভাইকে নিয়ে জাতীয় পার্টির নতুন কমিটি দিলেন এরিক