যানজট নিরসনে সিএমপির গুচ্ছ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই

| সোমবার , ৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর যানজট পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট দুপুর আর সময় গড়িয়ে রাত পর্যন্ত ঠেকছে। তীব্র গরমের মধ্যে গণপরিবহনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৩ এপ্রিল ‘যানজট নিরসনে সিএমপির একগুচ্ছ পরিকল্পনা/ ফুটপাতে ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রিতে মানা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মাহে রমজান উপলক্ষে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তার জন্য জনবল বাড়ানো হয়েছে। পার্কিং ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসনে সবগুলো মার্কেটে ট্রাফিকের জনবল থাকবে। গাড়ি পার্কিং করার জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব টিম থাকবে। থাকবে মাইকিং ব্যবস্থা। এছাড়া নগরবাসীর সুবিধার্থে ফুটপাত ও রাস্তার পাশের বিভিন্ন স্থাপনায় ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করাসহ সিএমপির পক্ষ থেকে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রমজানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে প্রতিদিন ইফতারের ব্যবস্থা করেছেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর বিভাগ) জয়নুল আবেদীন আজাদীকে জানান, রমজানের ঈদে কেনাকাটা আর যাত্রীদের চাপ থাকায় তিন শিফটে ডিউটি করবেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তিনি বলেন, রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় আমাদের দায়িত্বও বেড়েছে। বড় গাড়ি ও ট্রাক চলাচলে বায়েজিদ লিংক রোড ব্যবহার করতে হবে। দূরপাল্লার বাস কোনোভাবেই দিনে শহরে ঢুকতে পারবে না। রাতেই গাড়িগুলো ছাড়বে। তিনি আরও বলেন, রমজান উপলক্ষে ৬০ জন অতিরিক্ত জনবল বাড়ানো হবে। তারা ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করবেন। পার্কিং ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসনে সবগুলো মার্কেটে ট্রাফিকের জনবল থাকবে। এছাড়াও মার্কেট মালিকদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। কিভাবে পার্কিং ব্যবস্থা সহজ করা যায় সে বিষয়ে জেনেছি।
যানজট এখন চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছে- অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রফতানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশীরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বিঘ্নিত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় ৭০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরী অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায় যানজট।
দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে অনেক সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। বস্তুত যানজটের কারণে চট্টগ্রামবাসীর সামগ্রিক জীবনধারাই পাল্টা গেছে। একসময় এ শহরে ৩০ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে অনেক সময় চলে যায়। এখন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, সামান্য দূরত্ব অতিক্রম করতেও সময় লাগবে আগের থেকে অনেক বেশি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া মানুষ এখন আর কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা চিন্তাও করে না। এই বিচ্ছিন্নতা যে সমাজে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন।
ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেটকারের সংখ্যা বিদ্যুৎ গতিতে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে সামপ্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণে-অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে। যেখানে- সেখানে পার্কিং, ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো ইত্যাকার সমস্যা তো বহু পুরনো। কিছুতেই নগরীর যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যানজট পরিস্থিতি দিন দিনই জটিল হচ্ছে।
যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে জনবল বাড়ানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকদের পথচলার সুবিধার জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনাও প্রশংসার দাবিদার। তবে তা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে- সেটাই কেবল ভাববার বিষয়। আমরা চাই চট্টগ্রাম নগরী যানজটমুক্ত থাকুক। মানুষের চলাচলে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে, তার ব্যবস্থা হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে