যানজট নিরসনে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

| শনিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নগরের যানজট নিরসন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এতে বলা হয়েছে, নগরে সাড়ে তিন লক্ষ যান্ত্রিক যান ও প্রায় তিন লক্ষ রিকশা চলাচল করে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। তবে বে-টার্মিনাল এবং টানেল নির্মাণ শেষ হলে গাড়ির চাপ বাড়বে শহরে। এতে বাড়বে যানজটও। এমনিতে নিত্য যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। গাড়ির চাপ বাড়লে তা হবে আরো অসহনীয়। এ অবস্থায় যানজট নিরসনে গ্রহণ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এজন্য প্রয়োজন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ। বৈঠকে শহরের প্রবেশপথে বেসরকারি কন্টেনার ডিপো এবং নগরে প্রায় ৭০ হাজার অবৈধ রিকশাকে যানজট সৃষ্টির জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়। যানজট সৃষ্টির অন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলা হয়, বিল্ডিং কোড না মেনে অধিকাংশ বহুতল ভবন এমনকি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট ভবন-মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় অতিথি বা দর্শনার্থীদের গাড়ি রাস্তায় রাখায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পার্কিং ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেখানে নিজস্ব গাড়ি ছাড়া অন্যদের গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ থাকে না। এতে সেবা নিতে আসা রোগী বা স্বজনদের গাড়ি রাস্তায় রাখতে হয়। এতেও যানজট সৃষ্টি করছে। বৈঠকে অধিকাংশ ফুটপাত অবৈধভাবে দখল হয়ে যওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
যানজটের জন্য মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসনও দায়ী, সে কথা উঠে এসেছে বৈঠকে। গ্রাম থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে কাজের খোঁজে। চট্টগ্রাম শহর পুরোপুরি অর্থনীতিনির্ভর শহর হয়ে গেছে। সরকারের যেসব পরিকল্পনা, তাতে এই অভিবাসন ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, অবকাঠামোর উন্নয়ন আর আইনের কথা যতই বলা হোক না কেন, সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। যে কোনো পর্যায়েই যাওয়া হোক, যানজট হবেই, যদি মানুষের সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে রাখা না যায়। এর জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যে শহরে লোকসংখ্যা বেশি, সেখানে তিন ধরনের পরিবহনব্যবস্থা দরকার- সারফেস, এলিভেটর ও আন্ডারগ্রাউন্ড। আমাদের এখানে শুধু সারফেসটাই আছে। এটা কোনো বড় শহরের চিত্র নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যানজট এখন শুধু চট্টগ্রাম বা ঢাকারই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। যানজট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। যানজটে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। আমাদের দেশের প্রায় রাস্তাই প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মিত ও যথেষ্ট প্রসারিত। কিন্তু যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা দখল করা হচ্ছে। ফলে সময়-অসময়ে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে দোকানপাট গড়ে ওঠার কারণেও তীব্র যানজট হচ্ছে। এগুলো উচ্ছেদ করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হবে। যানজট নিরসনে প্রথমত যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করতে হবে।
যানজট নগরবাসীর মনোপীড়ার কারণ। দুর্ভোগে পড়ার কথা নতুন নয়। যানজটে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শরীর-মনে যে চাপ পড়ে, তার ফলে বিবিধ রোগে, মনোবিকারে আক্রান্ত হচ্ছে নগরের মানুষ। কর্মী-মানুষ সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে না। পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হয়। এসবের সামষ্টিক প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়ছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বয় জরুরি। বৈঠকে সিটি মেয়র বলেছেন, পর্যায়ক্রমে অবৈধ রিকশা উচ্ছেদ করা হবে। এখন থেকে রিকশার বারকোড প্রদান করবে চসিক, সিএনজি বারকোড ব্যবস্থা করবে সিএমপি এবং ফুটপাতে টাইলস্‌ স্থাপন করে ফেন্সিং রেলিংয়ের মাধ্যমে সাজানো হবে। এতে ফুটপাতের ওপর দোকান বসলে ক্রেতা সহজে বিক্রেতার নিকট পৌঁছাতে না পারে।
মেয়রের এসব কথার বাস্তবায়ন হলে নগরীতে যানজট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে বলে আমরা মনে করি। মূলত যানজটমুক্ত হওয়ার জন্য করণীয় হলো সড়কগুলো শতভাগ দখলমুক্ত রাখা। সড়কের দুই পাশে ফুটপাতের ওপর ভাসমান দোকান বসা সম্পূর্ণ বন্ধ করা না হলে ও অবৈধ গাড়ি পার্কিং দমন করতে না পারলে কখনো সড়কগুলো যানজটমুক্ত রাখা সম্ভব হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে